গ্রামীণ শীতের সকাল: প্রকৃতি ও জীবন
আবহমান প্রকৃতির অন্যরকম এক সৌন্দর্য গ্রামীণ শীতের সকাল। হয়তোবা জামালপুরের ইসলামপুরের শীতের সকাল অন্যরকম এক সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে তুলে আমার মননে। কি অপরূপ নিঃসঙ্গ এক শীতের সকাল। অজস্র অগণিত স্মৃতি বিজরিত আমার সেই চিরচেনা পথ যেখানে আমার পায়ের ধুলো লেগে আছে। শীতের সূর্যের আলো যখন ঘাসের উপর পড়ে আলো প্রতিফলিত হয় তখন মনে হয় আমারই প্রতিচ্ছবি হয়তো সেই শিশির বিন্দুতে।
ভোরের আলো তখনো ঠিকমতো ফোটেনি। চারদিক ঢেকে আছে ঘন কুয়াশায়। শীতের সকালে গ্রামবাংলা যেন অন্য এক জগৎ—নীরব, ধীর আর গভীর মায়ায় মোড়ানো। দূরের গাছগুলো, তালগাছ, বাঁশঝাড় কুয়াশার আড়ালে ঝাপসা হয়ে থাকে, মনে হয় প্রকৃতি নিজেই নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।
শীতের সকালে গ্রামের ঘরগুলোতে শুরু হয় অন্যরকম ব্যস্ততা। মাটির চুলায় জ্বলে ওঠে খড়ি ও শুকনো কাঠের আগুন। আগুনের আঁচে বসে হাত সেঁকতে সেঁকতে মানুষ খোঁজে একটু উষ্ণতা। ধোঁয়ার গন্ধে মিশে থাকে শীতের বিশেষ এক আবহ—যা শহরের কংক্রিটে কখনো ধরা দেয় না। কোথাও কোথাও ভোরবেলা খেজুর গাছ থেকে নামানো হয় মিঠে রস। সেই রসের হাঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে গ্রামের মানুষ অপেক্ষা করে দিনের প্রথম আনন্দটুকুর জন্য।
শীতের সকালে মাঠের দৃশ্য বড়ই মনোরম। শিশিরে ভেজা ধানের জমি কিংবা সবজিখেত রোদ পড়লে চিকচিক করে ওঠে। গরু-মহিষ মাঠে নিয়ে যাওয়া কৃষকের গায়ে জড়ানো থাকে মোটা চাদর। হালকা রোদ উঠতেই তারা কাজে নেমে পড়ে—কারণ গ্রামবাংলার জীবন থেমে থাকে না, শীতও যার গতি থামাতে পারে না।

গ্রামের স্কুলপথে দেখা যায় শীতার্ত শিশুদের। কেউ মোটা সোয়েটার পরে, কেউবা পুরনো শাল জড়িয়ে দল বেঁধে স্কুলে যাচ্ছে। ঠোঁট কাঁপলেও চোখে থাকে প্রাণবন্ত হাসি। শীতের সকাল তাদের কাছে কষ্টের হলেও সেই কষ্টের মাঝেই লুকিয়ে থাকে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ।
শীতের সকালে গ্রামের প্রকৃতি যেন আরও কাছের হয়ে আসে। পাখির ডাক কুয়াশা ভেদ করে ভেসে আসে, পুকুরের পানিতে পড়ে রোদের ঝিলিক। নীরবতার মধ্যেও থাকে এক গভীর সৌন্দর্য, যা মনকে প্রশান্ত করে তোলে। এই সকাল শুধু প্রকৃতির নয়, মানুষের স্মৃতি ও অনুভূতিরও অংশ।

গ্রামবাংলার শীতের সকাল তাই কেবল একটি সময় নয়—এ এক অনুভব, এক জীবনদর্শন। যেখানে কুয়াশা, রোদ, শিশির আর মানুষের সহজ জীবন মিলেমিশে তৈরি করে অনন্য এক চিত্রকল্প। শহরের ব্যস্ততার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এই শীতের সকাল আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সহজতাই আসল সৌন্দর্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, তিতুমীর কলেজ।