ওয়াশিং মেশিনে ঘুরলো ১০ মিনিট, অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরল জিনতিয়াও
কথায় আছে, বিড়ালের নাকি সাত জীবন! চীনের পূর্বাঞ্চলে সম্প্রতি এমন এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে, যা এই প্রচলিত প্রবাদকে যেন সত্য প্রমাণিত করল।
‘জিনতিয়াও’ নামের একটি বিড়াল ওয়াশিং মেশিনের দ্রুত ঘূর্ণায়মান ড্রামের ভেতর টানা ১০ মিনিটের বেশি সময় আটকে থেকেও অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছে।
এই ঘটনায় বিড়ালটি সামান্য আহত হলেও বড় কোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট (এসসিএমপি) এই চাঞ্চল্যকর খবরটি প্রকাশ করেছে।
স্বভাব অনুযায়ী, উষ্ণ ও অন্ধকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে জিনতিয়াও সবার অগোচরে ওয়াশিং মেশিনের ড্রামের ভেতর ঢুকে পড়েছিল বিড়ালটি। মালিক বিষয়টি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এবং মেশিনটি চালু করে দেন। প্রায় ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলে কাপড় ধোয়ার প্রক্রিয়া।
কাপড় ধোয়া শেষে মালিক যখন মেশিনের ঢাকনা খোলেন, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান। ভেজা কাপড়ের স্তূপের ভেতর গুটিসুটি মেরে বসে আছে তার আদরের বিড়ালটি। পানির তোড় ও ড্রামের গতির সঙ্গে লড়াই করে বিড়ালটি তখনো জীবিত ছিল।
মেশিন থেকে বের করার পর দেখা যায়, জিনতিয়াও সম্পূর্ণ ভিজে চুপসে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে মেশিনের ভেতরে আছাড় খাওয়ার ফলে তার নাকের ডগাটি ঘষা লেগে লাল হয়ে গিয়েছিল। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এত বড় ধকলের পরও তার শরীরে বড় কোনো অভ্যন্তরীণ আঘাত বা হাড় ভাঙার চিহ্ন ছিল না।
ঘটনার মাত্র দুই দিন পরেই মালিক বিড়ালটির আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায় জিনতিয়াও পুরোপুরি সুস্থ ও চনমনে ভঙ্গিতে ক্যামেরার দিকে থাবা বাড়াচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগেই সে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।
বিড়ালটির মালিক 'জে মোডা শিয়াও জিয়ে' নামের অ্যাকাউন্ট থেকে এই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করার পর তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে দুই লাখ সতেরো হাজারের বেশি লাইক এবং বিশ হাজার মন্তব্য জমা পড়ে।
তবে এই ভিডিওটিই মালিককে নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছে। মন্তব্যের ঘরে নেটিজেনরা দুই ভাগে বিভক্ত। একদল মানুষ মালিকের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ক্ষোভ, বিড়ালটি মেশিনে আটকে থাকার পর দ্রুত পশু হাসপাতালে না নিয়ে মালিক কেন ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিলেন। একজন মন্তব্য করেন, "যিনি ভয়ের চোটে বিড়ালটিকে স্পর্শ পর্যন্ত করেননি, তার পোষা প্রাণী রাখার কোনো অধিকার নেই।"
অন্যদিকে, অনেকে মালিকের পক্ষেও যুক্তি দিয়েছেন। তাদের মতে, বিড়ালটি অভ্যন্তরীণ আঘাত পেয়েছে কিনা, তা না জেনেই তাকে স্পর্শ করা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারত। হয়তো সেই আশঙ্কায় মালিক শুরুতে তাকে ধরেননি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনাটি পোষা প্রাণীর মালিকদের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। পশু চিকিৎসকরা মনে করছেন, জিনতিয়াও নিতান্তই ভাগ্যবান হওয়ায় বেঁচে গেছে, কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, বাড়িতে বিড়াল বা ছোট প্রাণী থাকলে ওয়াশিং মেশিন, ড্রায়ার বা ওভেন চালু করার আগে ভেতরের অংশটি ভালো করে দেখে নেওয়া জরুরি। সামান্য অসাবধানতা আদরের প্রাণীর জন্য মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।