ওমরাতে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
ওমরাতে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য ওমরা ইবাদত গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কাবা শরিফের দিকে মুখ করে এই ইবাদত পালনের জন্য সারা বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মুসলিমরা মক্কায় যাত্রা করেন। হজের মতো নির্দিষ্ট মৌসুমে নয়, ওমরা সারা বছরই পালন করা যায়। তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে এটি অত্যন্ত পরিশ্রমের একটি ইবাদত। তাই পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ওমরার জন্য স্বাস্থ্যগত প্রস্তুতি কেন জরুরি

ওমরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধাপ হলো ‘তাওয়াফ’—কাবা শরিফকে ঘিরে সাতবার প্রদক্ষিণ করা এবং ‘সাঈ’—সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার যাতায়াত। এই দুই কাজই দীর্ঘ হাঁটা ও শারীরিক পরিশ্রমের দাবি রাখে। বয়স্ক ও শারীরিকভাবে দুর্বলদের জন্য তা বিশেষভাবে কষ্টকর হতে পারে। তাই বয়স নির্বিশেষে ওমরার পরিকল্পনা করার আগে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এতে শরীরের সহনশীলতা বাড়ে এবং কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা থাকলে তা আগেভাগেই নিরাময়ের সুযোগ মেলে। একই সঙ্গে ইবাদতের প্রতি মনোযোগ ও আন্তরিকতাও বৃদ্ধি পায়।

শারীরিক প্রস্তুতি: অভ্যাস ও যত্ন

ওমরার আগে নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন শরীরকে অভিযোজিত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম পায়ের পেশি মজবুত করে এবং হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে—পুষ্টিকর ও হালকা খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, এবং তৈলাক্ত ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ঘুমের নিয়মও ঠিক রাখতে হবে—রাতের ঘুম কখনোই দিনের বেলা প্রতিস্থাপন করা যাবে না। সময়মতো ঘুমানো ও ফজরের সময় ওঠার অভ্যাস তৈরি করা জরুরি।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের আবহাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। তাই যাত্রার আগে পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো আবশ্যক। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি মেনিনজাইটিস বা মৌসুমী ফ্লুর মতো আন্তর্জাতিক ভ্রমণসংক্রান্ত টিকা সময়মতো নেওয়া উচিত।

মানসিক প্রস্তুতি: ধৈর্য ও সহনশীলতা গড়ে তোলা

ওমরার সময় প্রচুর ভিড়, অপেক্ষা ও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। তাই যাত্রার আগে থেকেই মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখার অনুশীলন করতে হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা, ছোটখাটো অসুবিধায় সংযম ধরে রাখা, এবং মনোসংযোগ বাড়ানোর জন্য ধ্যান বা জিকির চর্চা উপকারী। পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোও মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ওমরার নিয়ম ও দোয়া শেখা

ওমরার প্রতিটি ধাপের নিয়ম-কানুন ও দোয়া আগেভাগে শিখে নেওয়া উচিত। এতে আত্মিক উন্নয়ন হয় এবং ইবাদতের সময় মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। মোবাইল অ্যাপে ‘দোয়া অ্যান্ড যিকির (হিসনুল মুসলিম)’ কিংবা ‘মুসলিম বাংলা কুরআন হাদীস দুআ’ থেকে প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো শেখা যেতে পারে।

রওনা হওয়ার আগে করণীয়

ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি করা জরুরি। এতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাদ যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
সবার আগে রাখতে হবে—পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট, হোটেল বুকিং ও ইহরাম পোশাক। এছাড়া নামাজের ম্যাট, আরামদায়ক জুতা, চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি, টিস্যু ও ব্যান্ড-এইড রাখা দরকার।

গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ডিজিটাল কপি গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সে সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনে যেকোনো সময় সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ, হাসপাতাল ও দূতাবাসের ফোন নম্বর হাতে রাখা জরুরি। লাগেজে নিজের নাম, হোটেলের ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বরসহ টেকসই লেবেল ব্যবহার করতে হবে, যাতে ভ্রমণের সময় অদল-বদলের ঝুঁকি কমে।

ওমরাকালীন সতর্কতা

ওমরার সময় শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। একটানা হাঁটার বদলে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। মূল্যবান জিনিস মানিবেল্টে বা নিরাপদ পাউচে রাখতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী হোটেলে রেখে বের হওয়া শ্রেয়।
ভিড় এড়িয়ে চলা, নির্ধারিত পথ ব্যবহার করা এবং গ্রুপের সঙ্গেই থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে নির্ধারিত মিটিং পয়েন্টে পৌঁছাতে হবে এবং যোগাযোগ রাখতে হবে।

শেষ কথা

সফলভাবে ওমরা পালনের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি অপরিহার্য। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, ঘুম ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি দোয়া ও নিয়ম শেখা, নথি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখা জরুরি। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভিড় এড়িয়ে ধৈর্য ও সতর্কতা বজায় রাখলেই ইবাদত হবে শান্তিপূর্ণ ও সফল।