সাপে কাটলে কী করবেন? যা করবেন না

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
সাপে কাটলে কী করবেন? যা করবেন না

বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব সাধারণ একটি সমস্যা। ভারী বৃষ্টিতে যখন আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়, তখন সাপরা নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি বা উঁচু স্থানে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে সাপে কামড়ানোর ঘটনা বেড়ে যায়। সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সাপের কামড়ের পর কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়—এগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাপে কামড়ানো আক্রান্তরা প্রায়শই অতিরিক্ত আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যা বেশ ক্ষেত্রে জীবনহানির কারণও হতে পারে। তাই আহত ব্যক্তিকে শান্ত ও আশ্বস্ত রাখা ও সাহস দেওয়া জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, নির্বিষ সাপের দংশনে মৃত্যু ঘটে না এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপই বিষহীন। বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম এবং সেগুলোও প্রায়শই শিকারের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ ইনজেক্ট করতে ব্যর্থ হয়।

সাপে কাটলে কী করা উচিত

সাপে কাটা ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিত এবং পথে প্রাণরক্ষার জন্য কয়েকটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রথমত, আক্রান্ত ব্যক্তিকে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না—তার ভয় ভুলিয়ে তাকে শান্ত ও আশ্বস্ত রাখুন। বিশেষত নির্বিষ সাপের কামড়ে সাধারণত মৃত্যু হয় না; দেশের অধিকাংশ সাপ বিষহীন এবং বিষধর সাপও প্রায়শই পর্যাপ্ত বিষ ইনজেক্ট করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, আক্রান্ত অঙ্গটি স্থির রাখার ব্যবস্থা করুন। বেশি নড়াচড়া না করে আধাশোয়া অবস্থায় রেখে হাঁটাচলা বা ঝাঁকুনি থেকে বিরত রাখা উত্তম।

তৃতীয়ত, ক্ষতস্থলে একটু চাপ দিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিন — এটি প্রেসার ইমোবিলাইজেশন নামে পরিচিত। ব্যান্ডেজ না থাকলে গামছা, ওড়না বা সাদামাটা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।

চতুর্থত, রোগী শ্বাস না নিলে অবিলম্বে মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

পঞ্চমত, আক্রান্ত স্থান জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবান দিয়ে ধুয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে হালকাভাবে মুছে নিন। পাশাপাশি পড়নো অলঙ্কার, ঘড়ি, তাবিজ ইত্যাদি খুলে ফেলুন, কারণ এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং চিকিৎসায় সমস্যা করতে পারে।

সাপে কামড়ালে যে ভুলগুলো করা উচিত নয়

স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা সাপে কাটা পরিস্থিতিতে বেসামাল ও অপ্রমাণিত উপায়ে সময় নষ্ট করা ঠিক নয় বলে সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন—ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না এবং আক্রান্ত অঙ্গে কোনো ধরণের ভেষজ ওষুধ, উদ্ভিদের বীজ, লালা, গোবর, কাদা বা পাথর লাগানো ঠিক নয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, আক্রান্ত স্থানে মুখ দিয়ে টেনে বিষ বের করার প্রচলিত ধারণা ভ্রান্ত; সাপের বিষ লসিকা ও রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়, তাই এইভাবে নিঃসরণ সম্ভব নয় এবং এটি কেবল আহত ব্যক্তি নয়, মুখ দিয়ে টানবেন তার জন্যও ক্ষতিকর।

তাদের মতে, কামড়ানোর স্থানে খুব শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে বাঁধাও অনুচিত; এতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে টিস্যু নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ছুরি বা ব্লেড দিয়ে দংশনের স্থানে আঁচড় দেওয়া উচিত নয় — এমন পদক্ষেপ কেবল বিশেষজ্ঞের অধীনে হওয়া জরুরি।

বিষণ ঘটলে ব্যথা কমাতে অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাইয়েও চলবে না; কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আক্রান্ত স্থানে সেঁক বা লাগানোও বারণ।

অবশেষে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, খাদ্য খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা ঠিক নয়, কারণ আক্রান্তদের কথা বলা, গিলে খাওয়া বা বমি হওয়া সংক্রান্ত সমস্যায় এই কাজ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।