পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ কমিশন গঠনের পরামর্শ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম
পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ কমিশন গঠনের পরামর্শ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের

অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ বলে মন্তব্য করে পরিবেশের সুরক্ষায় বিশেষ কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাপা ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।’

বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী— এ কথার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বাজার অর্থনীতির কারণে জমির অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। যে কারণে নদ-নদী, জলাভূমি ও বনভূমি দখল করে আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কালোটাকার প্রভাবও দায়ী।’

পরিবেশ সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নিজেই একজন পরিবেশবিদ। তিনি পরিবেশ সুরক্ষায় ইতোমধ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে, বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করলেও পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময় পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে আন্দোলন করছে। ফলে দেশে অনেক অত্যাধুনিক আইন থাকলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুফল পেতে চাইলে সবাইকে একই মঞ্চে আনতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি সহজ হবে।’

অতীতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয়নি; বরং ওই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। আমাদের পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে—এমন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বেনের প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম।

ধারণাপত্র উপস্থাপনকালে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৫ বছরের কাজের মধ্য দিয়ে বাপা ও বেন দেশের পরিবেশের সমস্যাবলি সম্পর্কে এক বিপুল জ্ঞানভান্ডার গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের আর কোনো সংস্থার কাছে, এমনকি সরকারের কাছেও এ দেশের পরিবেশের সমস্যাবলি সম্পর্কে এরূপ তথ্য, বিশ্লেষণ ও সুপারিশের সম্ভার আছে কিনা সন্দেহ। এসব গ্রন্থ এখন বাংলাদেশের পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উৎস হিসেবে কাজ করছে।’

তবে বাপাকে এখনও উজানে নৌকা বাইতে হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘স্ব-অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিবেশ রক্ষামূলক কাজের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা কঠিন হচ্ছে। এই কাজে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছরের পথচলায় বাপার অনেক অর্জন থাকলেও সারা দেশে কার্যকর পরিবেশ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। সারা দেশে স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা নিয়ে ভুক্তভোগী জনগণ আন্দোলন করছেন, যাদের অনেকের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারেনি। অনেকে এখনও বাপার খোঁজখবর রাখে না। তাদের কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন— শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ, বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাপা সহ-সভাপতি ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম ও খুশী কবির, বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

সম্মেলনের প্রথম দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রথম অধিবেশনে ‘রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাপা ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম’, দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ এবং তৃতীয় অধিবেশনে ‘বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টি দূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আলোচনা হয়।

শনিবার দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ’, পঞ্চম অধিবেশনে ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ষষ্ঠ অধিবেশনে ‘বন, পাহাড়, উপকূল ও আদিবাসী অধিকার’ নিয়ে আলোচনা হবে।

এরপর সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হবে। সেই প্রস্তাব আগামীকাল (শনিবার) বিকেল ৫টায় সমাপনী অধিবেশনে তুলে ধরা হবে।

সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।