৪০ বছরের ভেতর শীত হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে

Staff Reporter
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশিত:২০ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫১ এএম
৪০ বছরের ভেতর শীত হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে
ছবি : সংগৃহীত

গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিস্থিতি চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠতে পারে। নতুন এক গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছে, ২০৪১ থেকে ২০৭০ সালের মধ্যে দেশের গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ তা ১.৫ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং নরওয়েজিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ুর রিপোর্ট-২০২৫’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১১ সাল থেকে সংস্থা দুটি যৌথভাবে জলবায়ু নিয়ে কাজ করছে এবং এটি তাদের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।

তাপপ্রবাহ ও ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, ভবিষ্যতে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব—উভয়ই বাড়বে। বিশেষ করে মার্চ থেকে মে মাসে (প্রাক-বর্ষা মৌসুমে) তাপপ্রবাহ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ২০৭০ সাল নাগাদ তাপপ্রবাহের দিন ৭৫ শতাংশ বেড়ে টানা ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমনকি বর্ষাকালেও ভ্যাপসা গরম ও তাপপ্রবাহ বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজধানী ঢাকার জন্য পূর্বাভাসটি বেশ উদ্বেগজনক। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকাবাসীকে বছরে অন্তত দুবার তীব্র তাপপ্রবাহ বা ‘হিট ওয়েভ’-এর মুখোমুখি হতে হবে—একবার বর্ষার আগে এবং আরেকবার বর্ষার পরবর্তী সময়ে (অক্টোবর-নভেম্বর)।

শীতকাল বিলুপ্তির আশঙ্কা তাপমাত্রা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে শীত ঋতুর ওপর। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শীতের আমেজ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, শতাব্দীর শেষ নাগাদ বাংলাদেশে শীতকাল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ওই সময়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কেবল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু জেলায় এক বা দুই দিনের জন্য মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।

বৃষ্টিপাত ও বন্যা বাংলাদেশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের বড় অংশই হয় বর্ষাকালে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ে ১১৮ মিলিমিটার এবং ২১০০ সাল নাগাদ তা ২৫৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বে যেখানে বছরে গড়ে ২.১ মিলিমিটার পানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের উপকূলে এই হার ৫.৮ মিলিমিটার হতে পারে।

এর ফলে শতাব্দীর শেষে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৮ শতাংশ ভূমি স্থায়ীভাবে সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। সুন্দরবনের প্রায় ২৩ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে।

কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে প্রভাব জলবায়ুর এই পরিবর্তন দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যে বড় আঘাত হানবে। অতিরিক্ত গরমে শ্রমিকের কর্মক্ষমতা কমবে এবং ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়বে। অন্যদিকে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মিঠাপানির মাছ ও ফসলের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুষ্ঠানে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো একক পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটি কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানিসহ সব খাতকে প্রভাবিত করছে। তাই সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হুট করে থামবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, আশ্রয়কেন্দ্র বৃদ্ধি এবং আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করতে হবে।