আত্রাইয়ে কমেছে সরিষার আবাদ
নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হলেও গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার কৃষকেরা ৮৫ হেক্টর জমিতে কম সরিষার আবাদ করতে পেরেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৫০ হেক্টর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আটটি ইউনিয়নে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭৬৫ হেক্টর। ওই বছর অর্জন হয় ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। অপরদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬ হাজার ২৪০ হেক্টর, তবে অর্জন হয়েছে ৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮৫ হেক্টর কম। এ বছর ৪ হাজার ৪০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বাউল্যাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল বাশার, বাচ্চু, আলামিনসহ অনেকে জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে জমি সরিষা চাষের উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। ফলে তারা এ বছর সরিষা আবাদ করতে পারেননি। অথচ কম খরচে সরিষা উৎপাদন করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন।
তারা আরও জানান, বিগত বছরে সরিষা বিক্রি করে প্রত্যেকেই অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। সরিষা চাষ অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম হলেও লাভ বেশি।
বড় শিমলা গ্রামের কৃষক রতন মোল্লা বলেন, “আমাদের এলাকার জমি উঁচু হওয়ায় সঠিক সময়ে কিছু জমিতে সরিষা আবাদ করতে পেরেছি। তবে যাদের জমি নিচু, বৃষ্টির কারণে তারা এ বছর সরিষা চাষ করতে পারেননি। তারা ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করেছেন।”
মষ্কিপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, “কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এলাকার জমি নিচু হওয়ায় মাঠে পানি জমে থাকায় এ বছর সরিষা আবাদ করা সম্ভব হয়নি।”
এদিকে মাগুরাপাড়া গ্রামের কৃষক ছাইদুর রহমান বলেন, “যে জমিতে আগে সরিষা চাষ করতাম, বন্যার কারণে এবার সেখানে ধান চাষের উপযোগী করে তুলছি।”
অন্যান্য কৃষকেরা জানান, সরিষা আবাদ ভালো না হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। তবে ভুট্টা বা অন্যান্য ফসলের ফলন কম হলেও ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়। এ কারণে অনেক কৃষক সরিষা বাদ দিয়ে অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, “অসময়ে বৃষ্টির কারণে সরিষা বপনের সময় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এ বছর সরিষার আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে অন্যান্য ফসলের আবাদ বেড়েছে। যেসব জমিতে সরিষা আবাদ করা সম্ভব হয়নি, সেসব জমিতে পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকেরা ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করেছেন।”