Daily Bangla Post

নকল অস্ত্র তৈরির কারখানাকে ‘আসল’ ভেবে আটক ৩

Staff Reporter
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০৮ পিএম
নকল অস্ত্র তৈরির কারখানাকে ‘আসল’ ভেবে আটক ৩

খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় (১৩ ডিসেম্বর) একটি লেদ কারখানায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরির সন্দেহে কারখানার মালিকসহ তিনজনকে আটক করেছিল খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি)। গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পরিচালিত এই অভিযানে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০-৩৫টি কথিত অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ উদ্ধারের দাবি করা হয়। তবে পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাইয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এগুলো কোনো অবৈধ অস্ত্র নয়, বরং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা ডামি বা নকল অস্ত্র।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গণপূর্ত অফিসের বিপরীতে অবস্থিত 'দোহা আয়রন ফাউন্ডার' নামের একটি লেদ কারখানায় অভিযানটি চালানো হয়। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল যে, সেখানে গোপনে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে।

অভিযান শেষে কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রথমে সাংবাদিকদের জানান, ডিবি শাখার কাছে গোপন তথ্য থাকায় অভিযান চালানো হয় এবং উদ্ধারকৃত যন্ত্রাংশগুলো অ্যাসেম্বল করলে প্রায় ৩০টি ওয়ান শুটার গান ও পিস্তল তৈরি করা সম্ভব হতো। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আটককৃতরা—কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম, কর্মচারী শহিদুল ও আকবর আলী—অস্ত্র তৈরির কারিগর।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর ইসলামও প্রাথমিকভাবে জানান, আটক তিনজনের মধ্যে মূল কারিগরকে ঈশ্বরদী থেকে আনা হয়েছিল এবং এখানে ট্রিগার, ট্রিগার গার্ডসহ ঢালাইয়ের মাধ্যমে অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছিল।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। আটককৃতরা তখন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে জানান যে উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামগুলো সিসা বা অস্ত্র তৈরির ছাঁচ নয়, বরং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি ডামি অস্ত্রের যন্ত্রাংশ।

তারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি কাজের আদেশের নথি (অর্ডার কপি) দেখান। এই নথিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি প্লাটুন (সেনা, নৌ ও বিমান শাখা)-এর ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ পিস অত্যাধুনিক কাঠের ডামি অস্ত্র তৈরির অনুমতির কথা উল্লেখ ছিল।

পুলিশ দ্রুত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি নৌ শাখার প্রফেসর এস এম তাফসিরুল ইসলাম পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করেন।

প্রফেসর এস এম তাফসিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন, "এগুলো কাঠের অস্ত্র। মুখে এবং ট্রিগারে কেবল অ্যালুমিনিয়ামের পাত ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো কোনোভাবেই আসল অস্ত্রের মতো দেখায় না। বিএনসিসি সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্যই সরকারি এম এম সিটি কলেজের বিএনসিসি ডামি অস্ত্রের আদলে এগুলো বানাতে দেওয়া হয়েছিল।"

তিনি আরও জানান, কারা ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে, তা তাদের জানা নেই। তবে পুলিশ যাচাই-বাছাইয়ের পর নিশ্চিত হয়েছে যে উদ্ধারকৃত সবকিছুই ডামি সরঞ্জাম।

রাত দশটা নাগাদ কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের সামনে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, “অভিযানটি ছিল ডামি অস্ত্র তৈরির কারখানায়। ভুলক্রমে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এগুলো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি ডামি অস্ত্র ও সরঞ্জাম। আটক তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

শেষ পর্যন্ত এটি প্রমাণিত হলো যে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চালানো অভিযানটি ছিল একটি ভুল বোঝাবুঝির ফসল, যেখানে ডামি অস্ত্র তৈরির একটি বৈধ কারখানাকেই অবৈধ অস্ত্রের কারখানা হিসেবে ভুল করা হয়েছিল।