সন্তান হত্যার বিচার চাইতে ইউএনও অফিসের সামনে মা কুকুর, মামলার প্রস্তুতি

Staff Reporter
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৬ এএম
সন্তান হত্যার বিচার চাইতে ইউএনও অফিসের সামনে মা কুকুর, মামলার প্রস্তুতি
ছবি: সংগৃহীত

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী। কিন্তু দিন কে দিন নৃশংসতার দিক দিয়ে প্রাণীকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ এই জাতিটি নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে যেন অনন্য এক উচ্চতায়। আর নৃশংসতার এক ভয়াবহ প্রমাণ মিলল পাবনার ঈশ্বরদীতে। সদ্যজাত আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে করা হয়েছে হত্যা।

আর নিজের হারানো সন্তানদের খোঁজে দিকবেদিক দিশেহারা হয়ে ছুঁটছে মা কুকুরটি। তার ফুটফুটে আটটি ছানাকে যখন সে খুঁজে পায় তখন সবগুলোই মৃত।

একইসঙ্গে আট সন্তান হারানোর বেদনায় রীতিমতো অসুস্থ্য হয়ে পড়ে কুকুরটি। কিন্তু মানুষের বিচার তো তার পক্ষে এই দুনিয়াতে করা সম্ভব না। যে কারণে হত্যার বিচার দিতেই যেন সে স্মরণাপন্ন হয় আরেক মানুষের। ছুটে আসে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে।

গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মা কুকুরটি উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় তলায় ইউএনওর কক্ষের সামনে ঘুরঘুর করছে। এটিকে সেখান থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি কয়েকজন কর্মচারী। দুপুর ১২টার দিকে কুকুরটিকে আদর করে নিচে নামান কয়েকজন। বিকেল পর্যন্ত কুকুরটি উপজেলা পরিষদের আশপাশে ঘুরঘুর করছিল।

এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য যার কারণে দেখা গেছে তিনি একজন নারী। নাম নিশি বেগম। ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী।

শুধুমাত্র বাসার সামনে ডাকাডাকি করার কারণে বিরক্ত হয়ে এমন পাশবিক এক কাজ করে বসেছেন এই নারী।

যদিও নিজে কুকুর ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলে হত্যার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত নিশি বেগম। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাগুলো এবং কুকুরটি আমার বাসার সিঁড়ির পাশে থাকত। বাচ্চাগুলো আমাদের খুবই ডিস্টার্ব করত, তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি গাছের পাশে রেখে আসি। এরপর হয়তো কোনোভাবে পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। আমি নিজে বাচ্চাগুলোকে পুকুরে ফেলে দিইনি।’

অসহায় এই মায়ের সন্তান হারানোর নীরব আর্তনাদ নজরে আসে ইউএনওর। সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে তার কোয়াটার থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এটি চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ। শাস্তিস্বরূপ ওই কর্মকর্তাকে এক দিনের মধ্যে সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মা কুকুরটির চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, কুকুরছানা হত্যার দায়ে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মঙ্গলবার রাতে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।’

মামলার প্রেক্ষিতে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) অভিযুক্ত নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

বিপি/এনএ