ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, বেড়িবাঁধে ভাঙন

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম
ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, বেড়িবাঁধে ভাঙন

টানা দুই দিনের বর্ষণে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট পানিতে ডুবে গেছে। ফুলগাজীর শ্রীনগর, পরশুরামের রাধানগর, জঙ্গলঘোনা ও মির্জানগর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলগাজী ও পরশুরামের নিম্নাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে নিতে মাইকিং করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মজিবুর রহমান জানান, ফেনীতে গত সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ৩টা থেকে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বেলা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৪৪০ মিলিমিটার, যা চলতি মৌসুমে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত। এতে শহরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

টানা বৃষ্টিতে ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান ধসে গেছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সিলোনিয়া নদীর পানি ও পরশুরামে বৃষ্টির পানি বিপৎসীমায় পৌঁছেছে।

বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে শহরের এসএসকে রোড, একাডেমি রোড, পাঠানবাড়ি রোড, নাজির রোড, মিজান রোড, কলেজ রোড, শান্তি কোম্পানি রোড, কদলগাজী রোড, পেট্রোবাংলোসহ বিভিন্ন এলাকা।

শহরে রিকশা, ভ্যান ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও আবার কোমর পানি জমে আছে। অধিকাংশ বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি উঠে গেছে।

স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করেও কোমরপানির কারণে যেতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বিভিন্ন গ্রুপে স্কুলগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে। যারা পরীক্ষার্থী ছিলেন তারা বিশেষভাবে পানির মধ্যে হেঁটে বা রিকশা-ভ্যানে করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

মার্কেট ও দোকানগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে গেছে অনেক গাড়ি। সকাল থেকে সড়কে আটকেপড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কোমর পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ফেনী পৌর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী তারেক জানান, সকাল থেকে দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে। গেল বছরের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর, গদানগর ও মনিপুর গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলার মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল মান্নান বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি গড়িয়ে সুবার বাজারের দক্ষিণাংশ তলিয়ে গেছে।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা ১২.৯৬ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বিকেল ৩টায় ১২.২৬ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। বিকেল চারটার পর থেকে মুহুরী নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফেনী উজানে ভারতের ত্রিপুরা ও ফেনীতে এখনও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার নেপাল সাহা বলেন, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) চারটার পর থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমান জানান, আগামী ২-৩ দিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পানি নামছে ধীরগতিতে।

ফেনী পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

ইতোমধ্যে পৌরসভার সাতটি টিম মাঠে কাজ করছে। চলমান বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে কহুয়া নদীর বাঁধের উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। তবে এখনো তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বাড়ছে।