পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, শেরপুরে গ্রীষ্মেই বন্যার আশঙ্কা

Bangla Post Desk
ইউএনবি
প্রকাশিত:২১ মে ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, শেরপুরে গ্রীষ্মেই বন্যার আশঙ্কা

গত পাঁচ দিন ধরে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। এতে বর্ষার আগেই জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তর ও আবহাওয়া বিভাগ শেরপুরে বন্যার সতর্কতা জারি করেছে। মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে, যা জনজীবন ও কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আগাম বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলায় উপজেলায় এরই মধ্যে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের দ্রুত ধান কেটে উঁচু স্থানে সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের আগাম সতর্কবার্তা প্রচার করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতামূলক মাইকিংও করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) বিকাল ৩টা পর্যন্ত নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালি নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীতে পানিবৃদ্ধির কারণে ওই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধটিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। গত বছরের পাহাড়ি ঢলের কারণে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধটির সংস্কারকাজ চলার মাঝেই আগাম বন্যার কবলে পড়েছে বেড়িবাঁধটি।

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে দিঘীরপাড় এলাকায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের কয়েক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে; বালির বস্তাগুলোও ধ্বসে যেতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, সোমেশ্বরী নদীর প্রবল স্রোতে ঝিনাইগাতীর বাগেরভিটা এলাকায় নির্মাণাধীন চাপাতলী সেতুর একটি সাটারিং ভেঙে পাশের তিনটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি খুব নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে বর্ষার পানির প্রবাহে সেটি বাধার সৃষ্টি করছে, যে কারণে পানি স্ফীত হয়ে আশপাশের বাড়িঘরে উঠছে।

জেলায় বোরো ধানের জমিতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, মাঠে এখনো প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা বাকি রয়েছে। তারা দ্রুত ধান কেটে ফেলার চেষ্টা করছেন, তবে অনেক চাষিই জমিতে ধান ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শেরপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান জানিয়েছেন, জেলার নদ-নদীগুলোর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীভাঙন ঠেকাতে প্রায় ৮ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, জেলার ৮৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি জমির ধান ৮০ শতাংশ পেকে গেছে, তাই সেগুলোও দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আগাম বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দপ্তর ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ে শুকনো খাবার ও টিন বরাদ্দ চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে, তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগাম বন্যা মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’