‘সাচ্চা দেশপ্রেমিক’ হাদির মৃত্যুতে জামায়াত আমিরের শোক
আপসহীন জুলাই যোদ্ধা, ভারতীয় আধিপত্যবাদ-বিরোধী কণ্ঠস্বর, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ শোক প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন একজন সাহসী জুলাই যোদ্ধা ও সাচ্চা দেশপ্রেমিক। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তার কণ্ঠ ছিল সব আধিপত্যবাদী শক্তি ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন আপসহীন এক যোদ্ধা। দুনিয়ার কোনো লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওসমান হাদি মানবিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ন্যায়, সত্য ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার শাহাদাতে জাতি একজন নির্ভীক কণ্ঠস্বর ও আদর্শবাদী যোদ্ধাকে হারাল। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর নতুন প্রজন্মকে ধারণ করতে হবে এবং দল-মত নির্বিশেষে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।’
মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমি মহান আল্লাহর দরবারে তার রুহের মাগফিরাত ও শাহাদাত কামনা করছি। তার মাসুম বাচ্চাসহ স্ত্রী, শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, সহযোদ্ধা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা যেন তাদের সবাইকে এই বিরাট শোক সইবার তাওফিক দান করেন সেই দোয়া করি।’
এর আগে হাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেলের নিউরো টিমের সদস্য হাদির চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের নিউরো সার্জিক্যাল টিম তার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে। বাংলাদেশ সময় সাড়ে নয়টার দিকে হাদি মারা যান বলেও জানান তিনি।
ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহিদ হিসেবে কবুল করেছেন।’
গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।
ওইদিন মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানা যায়, গুলি ওসমান হাদির মাথার ডান দিক থেকে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে, তবে অংশবিশেষ এখনো তার ব্রেনে রয়েছে।
সেখানে জরুরিভিত্তিতে অস্ত্রপচার করার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের উদ্যোগে তাকে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওসমান হাদির মৃত্যু হয়।