অধস্তন আদালত বিকেন্দ্রীকরণে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে: সালাহউদ্দিন আহমদ


উপজেলা পর্যায়ে আদালত বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনাসহ সবাই একমত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, অধস্তন আদালত বিকেন্দ্রীকরণে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের বৈঠকের দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের শেষে সাংবাদিকদের তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন।
অধস্তন আদালতের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেমন, জেলা সদরে অবস্থিত উপজেলায় আদালত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। যেহেতু, সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সদর উপজেলা আদালত জেলা সদরে জেলা জজকোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া যায়, তাতে জেলা সদরে উপজেলা আদালত প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় ‘
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে—যেগুলো ব্রিটিশ আমালের চৌকি হিসেবে চিহ্নিত ছিল—সেগুলো, দ্বীপাঞ্চল ও কিছু কিছু উপজেলায় আদালত প্রতিষ্ঠিত আছে। সেই সংখ্যাটা ৬৭, যেটা আমরা পরিসংখ্যানে পেয়েছি। কম-বেশিও হতে পারে। এগুলো প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তবে সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
‘যেসব উপজেলা জেলা সদরের খুব কাছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা যেহেতু আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে, সে জন্য কোনো উপজেলা সদর উপজেলা হেডকোয়ার্টার্সের ১৫ বা ২০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে সরকারিভাবে আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাস ও তা রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ ব্যাপার। সেই বিবেচনায় একটি বিস্তারিত জরিপ পরিচালনা শেষে সেসব উপজেলা সদর বা হেডকোয়ার্টার্সে আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই বলে মতামত দেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘উপজেলার দূরত্ব, জনঘনত্ব ও অর্থনৈতিক অবস্থা, যোগাযোগ, কোন কোন উপজেলায় কত মামলা আছে ও অন্যান্য বিষয়াবলি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এরপর একটি জরিপ কার্যক্রম করে পর্যায়ক্রমে সমস্ত উপজেলায় আদালত স্থাপনে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।’
‘আইনি সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করার বিষয়েও একটা ঐকমত্য এসেছে। মোটামুটি এই বিষয়গুলো নজরে রেখে উপজেলা আদালত কিংবা অধস্তন আদালত বিকেন্দ্রীকরণে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিগত দিনে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থাপনের বিষয়ে যে আলাপ হয়েছিল, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সেই একই বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা বলেছি, হাইকোর্টে স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থাপনের বিষয়ে বিচার বিভাগের সাথে আলোচনা করতে হবে।’
‘কারণ এ বিষয়ে ১৯৮৮ সালে সুপ্রিমকোর্টের একটি রায় আছে, সেই সংবিধান সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন সেটা স্থাপিত হয়নি। সামনে যাতে একই জটিলতায় পড়তে না হয়, সে জন্য আমরা বলেছি—বিচার বিভাগের সাথে আলোচনা করে, তাদের সম্পৃক্ত করে একটি সমাধানে আসতে হবে। সেই দায়িত্ব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের।’
এরআগে উপজেলা পর্যায়ে আদালত প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা তুলে দেওয়া হয়েছে, এখন সেটা আবার পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলে তখনকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও জাতীয় সেন্টিমেন্টের সাথে একমত হয়ে উপজেলা পর্যায়ের আদালত কিছুটা ব্যতিক্রম ছাড়া তুলে দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়। সেই বিষয়ে তখন কোনো আপত্তি জাতীয়ভাবে আসেনি। তবে বর্তমানে যে ৬৭টি আদালত আছে, সেটাও তখনকার সিদ্ধান্ত। এটা তখনকার অবস্থা। কিন্তু তার ৩৫ বছর পরে সময়ের প্রয়োজনে সেই বিবেচনা পাল্টাতে হয়েছে।’
জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত বিতর্ক সংসদে হওয়া উচিত: বিএনপি
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪১ এর ক, খ ও গ ধারাগুলোতে কোন সময়ে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন, কীভাবে করবেন, সেটা বিবৃত আছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণাকালে নাগরিকদের কী কী মৌলিক অধিকার সাসপেন্ডেন্ট থাকবে, সেগুলো বিষয়ে বলা আছে। কতদিন জরুরি অবস্থা রাখা যাবে, সংসদে কতদিন পরে উপস্থাপন করতে হবে, সংসদ বিদ্যমান না থাকলে কী করতে হবে, ইত্যাদি সেখানে বলা আছে।
‘এরসাথে আরও দুতিনটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, জাতিসংঘের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্র হিসেবে যে চুক্তিগুলো আছে, সেই বিষয়ে, মানবাধিকার কিছু বিষয়ে নাগরিকের কী কী মৌলিক অধিকার বহাল রাখা যায়, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব ছিল, পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে একটি বিস্তারিত বিতর্কের মধ্য দিয়ে আলোচনাক্রমে সেটা নির্ণয় করা যাবে। কারণ এটা অনেক বিস্তারিত। সংবিধানের এসব অনুচ্ছেদের অনুকূলে আইনও প্রণয়নও করা হতে পারে। সেগুলো সেখানেই বিবেচনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত বিষয়ে না গিয়ে আজ দুটি বিষয়ে একমত হওয়া গেছে: প্রথমত, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত বিধানাবলীতে পরিবর্তন ও সংশোধনী আনতে আমরা সবাই একমত। দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জরুরি আইন ঘোষণার কোনোভাবে অপব্যবহার করা না হয়। সেই বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে।’
‘তবে আমাদের প্রস্তাব, বিস্তারিত আলোচনাগুলো জাতীয় সংসদে হওয়া উচিত। সংসদে বিস্তারিত বিতর্কের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিধানে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনা যাবে। প্রয়োজনে, সেটার অনুকূলে আইনও প্রণয়ন করা যাবে।’
জরুরি অবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও সেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যাতে বিধিনিষেধ না আসে, তেমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মানে, জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে, তবে এসব মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।’
‘আমরা আলোচনা করেছি, জরুরি অবস্থা জারি করার অর্থ হচ্ছে কিছু কিছু মৌলিক অধিকার স্থগিত করতে হবে। জরুরি অবস্থা কি শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় জারি করা হয়? রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করার জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম নজির আছে। যেমন, কোথাও ভূমিকম্প কিংবা মহামারি হলো, বা কোথাও দুর্ভিক্ষ হলো, বিভিন্ন কারণে জরুরি অবস্থা সীমিতভাবে ওই অঞ্চলের জন্য করা যায়। এই প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভৌলিক অখণ্ডতার প্রশ্ন আছে, যদি বিদ্রোহ দেখা যায়, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে জরুরি অবস্থা জারি করা যায়, যেটা সারা দেশের জন্য হয়ত প্রযোজ্য হবে না। এগুলো পরবর্তী বিবেচনার বিষয়।’