যারা নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাচ্ছেন, নিশ্চিতভাবেই তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি কিংবা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সমর্থক না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (৬ জুলাই) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করতে চায়, তারা নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা নিশ্চয়ই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের শক্তি নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার কমিশনের সংস্কার বিষয়ে বিএনপি কোন কোন বিষয়ে একমতে পৌঁছেছে সেটিরও একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে প্রথম যে প্রস্তাব ছিল, আমরা আমাদের মতামত দিয়ে দিয়েছি, এটা বহু আগে দিয়েছি। তারপরে তো সরকার বলেছে তারা দায়িত্ব নিয়েছে তারা করবে। এখন পর্যন্ত তারা কিছু আনেনি।’
‘আমরা যেকোনো সময়ে যেকোনো ব্যাপারে আলোচনায় সব সময় ছিলাম, এখনো আছি। এই ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তি তারা বিএনপির সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম কথা বলছেন, যেগুলো সঠিক নয়। বিএনপির কমিটমেন্ট টু রিফর্মস, এটা কোয়েশ্চেন করবার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি হচ্ছে সেই দল যে, ২০১৬ সালে খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ তিনি সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তারপরে বিএনপি ’২২ সালে ২৭ দফা এবং অন্যান্য দলের সাথে আলোচনা করে ’২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি আমরা দিয়েছি।
‘এটাতে আমরা আন্তরিক বলেই কিন্তু ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে অসংখ্য প্রোগ্রাম করেছি, জনগণের কাছে যাওয়া হয়েছে, সুধী সমাজ, সুশীল সমাজের কাছে যাওয়া হয়েছে। আজকে একটা মহল, একটা চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করবার একটা অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে বিএনপির শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কত কর্মসূচি, কত সমাবেশ, কত লাঠিপেটা আপনারা দেখেছেন, আপনারা কাভার করেছেন। এখন বিএনপিকে নিয়ে এই প্রশ্নটা কেন করে? এটাকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ছাড়া আমি কী বলব?
‘বিএনপিকে মেলাইন করা, তাকে ভুলভাবে চিত্রিত করতে এটা একটা গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা চালানো মাত্র। কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি বা কয়েকটি গোষ্ঠী মিথ্যা প্রচারণা সমানে করে যাবেন আর সেটাতে তারা মনে করবেন জনগণ খুব সাড়া দিচ্ছে। জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। জনগণ বলতে গুটিকতক শহুরে লোক নয়, জনগণ বলতে সারা বাংলাদেশ।’
বিএনপির নীতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি প্রমাণ করেছে, এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সংস্কার আমাদের দলের প্রতিষ্ঠা জিয়াউর রহমান করেছেন। বাক স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, সংগঠন করবার স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্র, এমন কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে তিন তিনটা নির্বাচন সব কিছুই বিএনপি। সব কিছুই সংস্কারের মাধ্যমে বিএনপি করেছে।’
বিএনপির অবদান নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির পাঁয়তারা করে কোনো লাভ হবে বলে সতর্ক করেছেন ফখরুল।
সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হতে পারে না, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে কী না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা মনে করি যে, জনগণ নির্বাচন চায়, যেটা আলোচনা হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
সেই লক্ষ্যেই দেশ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চায়। আমরা কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে বা অন্য কিছুর মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি একটা মাত্র উদ্দেশ্যে যে আমরা গণতন্ত্রের ফিরে যেতে চাই।