এমন আবহাওয়া তৈরি করছে, নির্বাচন দাবি করাটাই যেন অপরাধ: তারেক

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০২ মে ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম
এমন আবহাওয়া তৈরি করছে, নির্বাচন দাবি করাটাই যেন অপরাধ: তারেক

দেশে নির্বাচনের দাবি তোলাকে “একটা অপরাধ” হিসেবে দেখানোর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, “কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে এমন একটি আবহ তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন অপরাধ।”

শুক্রবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ও নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।”

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে।”

তারেক রহমান বলেন, “জনগণের ভোটে দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা হলে রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন এবং পরিবর্তনে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন বাংলাদেশকে আর কেউ তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে পারবে না।”

নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনীতির ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন।”

বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, “প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। কী সেটি? সেটি হলো, দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগণের কল্যাণ সাধন। যে রাজনৈতিক দলটি গণতন্ত্র হারিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্ম দিয়েছিল, মানুষের অধিকার হরণ করেছিল, গুম-খুন-অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল, গণঅভ্যুত্থানে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।”

তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বাধীনতার বার্তা উপেক্ষা করে পতিত স্বৈরাচার দীর্ঘ দেড় দশক স্বাধীন বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, পরাজিত অপশক্তি ও তাদের দোসররা যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটিই হোক বাংলাদেশের আজ ও আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।”

জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনও সংস্কারই হয়তো টেকসই হবে না উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এ কারণেই রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিএনপি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জাতীয় সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্র-রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি অবজ্ঞা করে তাহলে সংস্কারের তাৎপর্যটা কী? এটি বহু মানুষের প্রশ্ন আজ।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি অর্জনের একটি হচ্ছে ৭১ সালের স্বাধীনতা, আরেকটি হচ্ছে ২০২৪ সালে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা। বাংলাদেশ নামক এই জাতিরাষ্ট্রের স্বাধীনতাপ্রিয় হাজারো লাখো শহীদের রক্তে লেখা স্মারকে ৭১ এবং ২৪ এর রাজনৈতিক বার্তাটি হলো দিল্লির তাবেদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পিণ্ডি ত্যাগ করে নাই।”

এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ এবি পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।