‘অনেকবার সতর্ক করেছিলাম, সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি’

Bangla Post Desk
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশিত:১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম
‘অনেকবার সতর্ক করেছিলাম, সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি’
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেছেন, ওসমান হাদি বাংলাদেশের অস্তিত্ব, তাকে ভারতপন্থিরা হত্যা করতে চায়। ইন্টেরিমকে অনেকবার সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু এই সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আরও অনেক জুলাই যোদ্ধাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে ডাকসুর এই নেতা বলেন, আমাদের ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক এবি জুবায়েরকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সাদিক কায়েম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ জুলাইয়ের সম্মুখ সারির নেতাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারিম কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ সার্ক ফোয়ারের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন মোসাদ্দেক আলী।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদিকে ভারতীয় প্রক্সি কর্তৃক টার্গেট কিলিং ও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- জুলাই ঐক্য।

এদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর শাহবাগ থেকে মিছিল শুরু করে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জুলাই ঐক্যের সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী, ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, সমাজ সেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ, কবি বুরহান মাহমুদ। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া, লে. কর্নেল ফেরদৌস আজিজ, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান।

মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ আরও বলেন, দিল্লির মিডিয়া ভেঙে দিতে হবে। ভারতের রাজধানী দুইটা, একটা দিল্লি অন্যটা কারওয়ান বাজার। এই কারওয়ান বাজারের কয়েকটি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে দিল্লির মসনদ।

বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা খুনিদের জামিন দিতে সহযোগিতা করছে- অভিযোগ তুলে জুলাই ঐক্যের এই সংগঠক বলেন, যারা লীগকে পুনর্বাসন করতে চায় তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগের বয়ানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে হলে দিল্লির মিডিয়াগুলো ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।

জুলাই ঐক্যের সংগঠক ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই আমরা প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের তালিকা প্রকাশ করেছিলাম; কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জুলাই যোদ্ধাদের কোনো প্রকার নিরাপত্তা তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। বারবার হাদি ভাইকে হুমকি দেওয়া হলেও সেগুলো নিয়ে প্রশাসন নীরব ছিল। এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা হাদি ভাইয়ের ওপরে হামলার ঘটনায় উল্লাস করছে।

তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা দায়িত্বে থাকবেন তারা সবাই তো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত।

এবি জুবায়ের বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে যখন অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তখন তিনি পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ল সেটা জানতে চান। বিদেশ থেকে আলু আসছে- এই তথ্য দেন।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গুলির ঘটনার পর থেকে জুলাই ঐক্যের দুজন সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী এবং মিনহাজ পুলিশের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রশাসন নিজ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসনেক আমরা খুনির তথ্য দিয়েছি। কিন্তু সেই খুনিকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই সরকার কোনো প্রকার আন্তরিকতা দেখায়নি।

আইন মন্ত্রণালয়ে এক ম্যুরাল বসে আছে- মন্তব্য করে এবি জুবায়ের বলেন, প্রতিদিন লীগের খুনিদের জামিন করানো হচ্ছে। তারা বের হয়ে জুলাই যোদ্ধাদের হত্যার মিশনে নামছে।

এ সময় জুলাই ঐক্যের সংগঠক ডাকসুর স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, আমরা হাদি ভাইয়ের ওপর হামলা হওয়ার পর থেকে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি। কিন্তু এই প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আমাদের দিতে পারেনি। আমরা আর বসে থাকব না, জুলাইকে রক্ষা করার জন্য লাখো হাদি আজ রাজপথে। গুলি করে আমাদের মুখ বন্ধ করানো যাবে না। ভারতীয় কোনো ষড়যন্ত্র আমরা আর মানব না। যেখানেই দিল্লির দোসরদের দেখা মিলবে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।

জুলাই ঐক্যের আরেক সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী বলেন, শরিফ ওসমান বিন হাদি আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের জুলাইয়ের চিহ্ন, স্বৈরাচারের দোসররা তাকে হত্যা করতে চায়। অথচ সরকার জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা না দিয়ে আরও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গণমাধ্যমের টকশোতে বসে হাদিকে হত্যাযোগ্য করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বিডি নিউজ ফ্রেমিং করে হাদি ভাইকে হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িয়েছে। আনিস আলমগীররা টকশোতে বসে জুলাই নিয়ে কটূক্তি করছে। আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি। গণমাধ্যম তাদের দিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করলে আমরা দেখে নেব, কীভাবে তারা মিডিয়া চালায়। ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে কোনো ভারতপন্থি মিডিয়া চলতে দেওয়া হবে না। এ দেশে কেবল বাংলাদেশপন্থি মিডিয়া চলবে।

এ সময় লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেন, বিডিআর কমিশন পরিষ্কার বলেছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারত সরাসরি জড়িত, অথচ ইন্টেরিম সরকার এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো প্রকার অভিযোগ করে নাই। এমনকি জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া বলেন, হাদিকে হত্যাচেষ্টা করা মানে বাংলাদেশের জুলাই জনতার মুখকে হত্যা করার শামিল। জুলাই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আধিপত্যবাদবিরোধী নেতাদের পাওয়া। সুতরাং হাদিই বাংলাদেশ।

লে. কর্নেল ফেরদৌস আজিজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই- আপনার ১৮ মাসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, খোদাবক্স এবং আইজিপি- এই তিনজন ভালো কোনো কাজ দেখাতে পারেনি, তারা ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে এই তিনজনকে বহিষ্কার করুন। দেশপ্রেমিক, যোগ্য, সৎ, সাহসী তিনজনকে নিয়োগ দিন। হাদির হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনতেই হবে।