কিলিং টার্গেটে হাদির পরে আছেন যারা

Staff Reporter
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশিত:১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ এএম
কিলিং টার্গেটে হাদির পরে আছেন যারা

৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, তাকে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন—এমন সুনির্দিষ্ট আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও এই হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, হাদি ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন ‘জুলাই সংগঠক’ একই ধরনের হামলার ঝুঁকিতে ছিলেন।

জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন আইনজীবীর মাধ্যমে এই টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। সময়মতো এই সংবেদনশীল তথ্য সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চপর্যায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি, শরিফ ওসমান হাদিসহ আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা তিন জুলাই সংগঠকও ব্যক্তিগতভাবে সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে এই হুমকির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই আইনজীবী বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে পেশাগত সম্পর্কের সূত্রে এই স্পর্শকাতর তথ্য হাতে পান এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিপদ আসন্ন বলে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ শুক্রবার (হামলার পর) জানান, অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে হামলার তথ্য পেয়ে তাঁরা সরকারকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়িয়ে মাঠের রাজনীতি করা সম্ভব নয়।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা সরকারকে বারবার বলেছি—নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। শুধু কয়েকজন ছিঁচকে চোর ধরে লোক দেখানো অভিযান সকলের জন্য আত্মঘাতী হতে বাধ্য।’

সূত্র জানায়, এই হামলা নিয়ে তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় এসে হাসনাত আবদুল্লাহ, ওসমান হাদি এবং ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। তাদের উদ্বেগের কথা জানার পর সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেন। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বা ‘বডিগার্ড’ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার ক্ষেত্রে দূরত্বের সৃষ্টি হবে বিবেচনা করে তাঁরা নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে চলাফেরার প্রস্তাবে রাজি হননি।

হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য জানানো ওই আইনজীবী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জানান, বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার পরই তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন এবং দ্রুত ঢাকায় এসে সংশ্লিষ্টদের জানান। তা সত্ত্বেও হাদির ওপর হামলা ঠেকানো সম্ভব না হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন এবং অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও জীবনের ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে উদ্বেগ জানান।

এদিকে, সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং আইজিপি বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে আইজিপি বাহারুল আলম ফিরতি খুদেবার্তায় জানান, ‘এ রকম কোনো কিছু আমরা পাইনি।’

অন্যদিকে, পুলিশ সূত্র বলছে, হাদির ওপর হামলার পেছনে বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের হাত থাকতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে ‘ফিলিপ ওরফে গারো ফিলিপ’ নামে এক ভাড়াটে কিলারের নাম উঠে এসেছে। পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে এবং ফিলিপকে গ্রেপ্তার করা গেলে কিলিং মিশনের নেপথ্যের হোতাদের নাম জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিপি/এনএ