কী কারণে ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কিনল বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তাদের সম্মুখসারির যুদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতালিভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস কোম্পানি লিওনার্দো এসপিএ-এর সঙ্গে বিমানবাহিনী অত্যাধুনিক ইউরোফাইটার টাইফুন (Eurofighter Typhoon) যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে একটি সম্মতিপত্রে (Letter of Intent - LOI) স্বাক্ষর করেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) নিশ্চিত করেছে যে এই টাইফুন যুদ্ধবিমান যুক্ত হলে বিমানবাহিনীর বহরে আধুনিক মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট-এর সক্ষমতা বাড়বে এবং দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন শক্তি যোগ হবে।
ইউরোফাইটারের ওয়েবসাইটে এই যুদ্ধবিমানকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক 'সুইং-রোল কমব্যাট বিমান' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি একই সঙ্গে এয়ার-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-সারফেস আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম।
ইউরোফাইটার টাইফুনের মূল বৈশিষ্ট্য:
নকশা: এটি একটি টুইন-ইঞ্জিন, ক্যানার্ড-ডেল্টা উইং, মাল্টিরোল ফাইটার। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এটিকে '৪.৫ প্রজন্ম' বা 'উন্নত চতুর্থ প্রজন্ম' হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এর নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ফ্রান্সের দাসো রাফাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট।
এয়ার-টু-এয়ার দক্ষতা: তীক্ষ্ণ সেন্সর, অসাধারণ গতিবেগ, উন্নত রাডার এবং উচ্চমানের ডগফাইটিং ক্ষমতার জন্য এটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
এয়ার-টু-গ্রাউন্ড আক্রমণ: গাইডেড বোমা, প্রিসিশন স্ট্রাইক অস্ত্র এবং রিয়েল-টাইম ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে এটি স্থলভাগে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম।
ইন্টেলিজেন্স ও নজরদারি: এটি শুধু যুদ্ধে নয়, শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও আকাশ প্রতিরক্ষার সামগ্রিক চিত্র তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্টেলথ বৈশিষ্ট্য: যুদ্ধবিমানটির মোট পৃষ্ঠের মাত্র ১৫ শতাংশ ধাতব হওয়ায় এটি রাডার-নির্ভর সিস্টেমের কাছ থেকে আড়ালে থাকতে পারে।
নির্মাণ: শক্তিশালী অথচ হালকা কম্পোজিট উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, যা এয়ারফ্রেমের ওজন প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এতে এর কর্মক্ষমতা, রেঞ্জ এবং রাডার সিগনেচার উন্নত হয়েছে।
ইঞ্জিন ও জ্বালানি: এতে বাজারের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ইজে২০০ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬০০ কেজি জ্বালানি বহনে সক্ষম।
ইউরোফাইটার টাইফুন কনসোর্টিয়ামটি গঠিত হয়েছে ইউরোপের চার শক্তিশালী দেশ—যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনের সহযোগিতায়। এই প্রকল্পের মূল অংশীদার হলো শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি এয়ারবাস, বিএই সিস্টেমস ও লিওনার্দো।
বর্তমানে বিশ্বের ৯টি দেশের বিমানবাহিনী এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান ও কাতার। সম্প্রতি তুরস্কও যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ২০টি নতুন ইউরোফাইটার টাইফুন কিনতে ৫.৪ বিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তি করেছে।
