ভোটের আগে আলোচনায় যে তিন জোট

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম
ভোটের আগে আলোচনায় যে তিন জোট
ফাইল ছবি
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পতনের লক্ষ্যে বিএনপির নেতৃত্বে যে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তারাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন জোট গঠন করে এবার ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামছে। নতুন বাস্তবতায় অতীতে নির্বাচনী শরিক দল জামায়াতের জোটই এবার ভোটের মাঠে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে আসতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জামায়াতের নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক আটটি দল একযোগে মাঠে নেমেছে। আসন সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বেশকিছু দলের জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
 
এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত তরুণদের দল এনসিপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ এবং আরও কয়েকটি দল মিলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের আলোচনাও আছে। জামায়াতের সঙ্গে, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ আটটি ইসলামপন্থি দল এই জোটে একতাবদ্ধ। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর এই জোট এখন বিভাগীয় সমাবেশ করছে।
 
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম শরিক ইসলামী আন্দোলনের একজন যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম বলেন, এটি নির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের সমঝোতা। সমঝোতা হইলো, ইসলামের নামে যত প্রতিনিধিত্বশীল দল আছে তাদের একটাই বাক্স থাকবে। এখানে হয়তো ইসলামী আন্দোলন থাকবে অথবা জামায়াত অথবা খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ বা আমাদের জোটসঙ্গী আরো যারা আছে এদের যেকোনো একজন প্রার্থী একটা আসনে দাঁড়াবে। এই লক্ষ্যেই আমাদের পথচলা।
 
অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নতুন শক্তি হিসেবে সামনে আসতে চায়। গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে এনসিপির একটি জোট গঠনের তৎপরতা শুরু হলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, এখন পর্যন্ত জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যে রাজনৈতিক দল জুলাই সনদের প্রতি ইতিবাচক এবং বাস্তবায়নের প্রতি আগ্রহী হবে তাদের সাথে আমাদের কৌশলগত অ্যালায়েন্স হইতে পারে।
 
তার ভাষায়, আগে গতানুগতিক যে নির্বাচনী জোট হতো এবার সেরকম জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ যেহেতু আরপিও সংশোধন করে প্রত্যেক দলকে তার নির্দিষ্ট মার্কায় অংশগ্রহণ করতে হবে সেই যায়গা থেকে এবার কৌশলগত অ্যালায়েন্স হবে।
 
এনসিপির এই নেতা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকটা দলের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কৌশল থাকবে। আবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান বা আধিপত্যবিরোধী একটা কৌশলগত অ্যালায়েন্স থাকবে। এই দুটো দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই এই কৌশল নিয়ে জোটের বিষয়ে সামনের দিকে আগানো হবে।
 
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, বিএনপি এবং জামায়াত দুই ফ্রন্টে দুটি জোট সারাদেশে ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলেই তারা ধারণা করছেন। ফলে নতুন একটি জোট করলেও তারা ভবিষ্যত বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিএনপি বা জামায়াতের নেতৃত্বে যেকোনো এক জোটের সঙ্গে সমঝোতা করবেন। একটা বাস্তবতা এই মুহূর্তে যে একটা তৃতীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন খুব ডিফিকাল্ট, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। তাহলে কোনো একটা ফ্রন্টের সাথে শেষ পর্যন্ত বোঝাপড়া বা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে যেতে হবে, সেটা বিএনপির ফ্রন্ট হোক বা জামায়াতের ফ্রন্ট হোক। এইগুলোর একটা বোঝাপড়া আছে।
 
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফোরাম, এলডিপি, বিজেপিসহ বাম ও ডানপন্থি কিছু দল একজোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
এদিকে, বৃহস্পতিবার নতুন করে ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরও ২৮টি আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। দলের নেতারা বলছেন, জোটের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আসনগুলো রাখা হয়েছে।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, তফসিল ঘোষণার পরই জোটের রূপরেখা পুরোপুরি স্পষ্ট হবে। বিএনপি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল। যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিল তাদের জন্য কিছু সিট আমরা রেখেছি। কিন্তু ইলেকশন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে নিজের মার্কা নিয়ে ভোট করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের মার্কাতো পপুলার না। ধানের শীষ নিয়ে ইলেকশন করা এক জিনিস, আর ওদের মার্কা নিয়ে ইলেকশন করা অন্য জিনিস। সেটা নিয়ে একটা কনফিউশন আছে।
 
বিএনপির এই নেতা যেকোনো আলোচনা-সমঝোতার ক্ষেত্রে দলের প্রাধান্য তুলে ধরে বলেন, এই যে জোটগুলোর মধ্যে একটা এন্টিকান্ট্রি-দেশদ্রোহিতার একটা জোট গঠন হচ্ছে। আবার দেশপ্রেমিকের একটা জোট গঠন হচ্ছে। ডেফিনেটলি দেশ প্রেমিকের জোটের সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশন হবে।
 
সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
 
বিপি/আইএইচ