‘মুজিববাদী সংবিধান দিয়ে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম
‘মুজিববাদী সংবিধান দিয়ে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন জুলাই ঐক্যের নেতারা। ছবি: বাংলাপোস্ট

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জুলাই ঐক্য। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মটির নেতারা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। এর বাইরে কোনো প্রকার যদি, কিন্তু, অথবা এসব বিষয় ছাত্রজনতা মেনে নেবে না। অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিলে— শহিদ পরিবার, আহত এবং জুলাইয়ের ছাত্রজনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ থেকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে। ভারতের তৈরি ৭২-এর মুজিববাদী সংবিধান দিয়ে চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও খুনি হাসিনার বিচার দাবিতে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন জুলাই ঐক্যের সংগঠক প্লাবন তারিক। 

তিনি বলেন, ১৪০০-এর অধিক ছাত্রজনতা শহিদ ও ৩২ হাজার আহত ভাইবোনদের রক্ত মাড়িয়ে আমরা স্বৈরাচারী হাসিনার পতন ঘটিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি ছিল তা গণহত্যাকারীদের বিচার। আগামী ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল খুনি হাসিনার বিচারের রায়ের তারিখ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এই দিনটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রশাসনের নিরবতার সুযোগ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে গণহত্যাকারীরা। 

প্লাবন তারিক বলেন, জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে বারবার প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি তোলা হলেও তার দৃশ্যমান কোনো কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। যেসব পুলিশ সদস্যদের হাতে আমার ভাইবোনদের রক্ত লেগে আছে, যেসব প্রশাসন কর্মকর্তা গুম, খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা এখনো সেই পদেই বহাল তবিয়তে। এর চেয়ে কষ্টদায়ক ও দেশের জন্য লজ্জাজনক কিছু হতে পারেনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য জুলাইকে ধারণ করে না, তারাই আজ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল। সেই সুযোগ নিয়ে সারাদেশে নৈরাজ্য করছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। আদালত গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের জামিন দিয়ে দিচ্ছে। অথচ এখনো গণকবরে ১১৪ জনের লাশ। যাদের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। আমাদের মায়েরা তার সন্তানের জন্য, বোনেরা তার স্বামীর লাশের জন্য পথে পথে ঘুরছেন। আমরা লক্ষ্য করছি, যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে এখনো শিক্ষকরা রাস্তায় পুলিশের হামলার শিকার হচ্ছেন।

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং সরকার মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে জুলাই ঐক্যের এই সংগঠক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই বিপ্লব নিয়ে নানাভাবে কটূক্তি করে যাচ্ছে। প্রথমে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়, সেই মতবিরোধ এখন রাজপথে আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকার প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তের জন্য ৭ দিনের সময় বেধে দিলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত আসেনি। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে ভারতের আধিপত্য কিছুটা কমলেও বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, পঞ্চগড়-কুড়িগ্রামসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তের কাছে ভারত ৩টি সেনা ঘাঁটি ও স্টেশন তৈরি করেছে। এমনকি সীমান্তের ১ কিলোমিটারের মধ্যে সেনা ঘাঁটি ও সেনা স্টেশন তৈরি করেছে ভারত। যা বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে আমরা মনে করি। অবিলম্বে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, আমাদের আজকে আলাপ করার কথা—জুলাই অভ্যুত্থানের একবছর পরে কতটুকু সংস্কার হলো, তা নিয়ে। অথচ এখনো আমাদেরকে খুনি, জঙ্গি সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। ১৪০০ মানুষের জীবন দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ কারণে ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছিল যে, তারা অপরাধী হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার করবে। তার খুনি বাহিনীর বিচার করবে। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার সুশীল হয়ে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিয়েছে। তার বিপ্লবের চেতনা থেকে চ্যুত হয়েছে। তারা কারো বিচার করে নাই, বরং তারা পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দিয়েছে।

ডাকসু নেতা বলেন, বিএনপি ২০২৩ সালে তাদের অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিল। সেই আন্দোলনে তাদের কর্মীরা ও দেশের জনগণ কেউ নামে নাই। তারা গত বছরের ৫ অগাস্টের পরও তাদের সেই অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে গেছে। এ সরকার কোনো সংস্কার করে নাই। আর যা সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার ন্যূনতম ছিটেফোঁটাও বিএনপির মনে নাই।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের আরেক সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আজ মুখোমুখি অবস্থানে। এক দল জাতীয় নির্বচানের দিনেই গণভোট চায়, আরেকটা অংশ জাতীয় নির্বাচনের আগে। এখানে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। বাহাত্তরের সংবিধানে এদেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনের দিন গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচন কোন সংবিধানের আলোকে হবে তা আগে জানতে হবে। যদি বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকেই দেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব। জুলাই সনদ অবিলম্বে বাস্তবায়িত হতে হবে এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও ডাকসু নেতা মুসাদ্দেক আলী। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- খুনি হাসিনার ফাঁসি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে বুধবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল। পরদিন ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ও প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার প্রতিবাদে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি।