ফিরে এলো 'না' ভোট
                                
                                                                    একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ রেখে 'গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' জারি করেছে সরকার।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে আইন মন্ত্রণালয় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর যদি কোনো নির্বাচনী এলাকায় কেবল একজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ওই প্রার্থী ও ‘না ভোট’-এর মধ্যে। যদি প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট ‘না ভোট’-এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে রিটার্নিং অফিসার তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। তবে ‘না ভোট’ বেশি হলে ঐ এলাকায় নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও বলা হয়েছে, যদি প্রথম নির্বাচনে ‘না ভোট’ বেশি হয় এবং পরবর্তী নির্বাচনে আবারও একজন প্রার্থী বৈধভাবে মনোনীত থাকেন, তাহলে রিটার্নিং অফিসার তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন।
তবে কোনো প্রার্থী যদি মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করতে চান, তাহলে আপিলের নির্ধারিত সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিংবা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা যাবে না।
সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো বিদেশে থাকা ভোটাররা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, কারাগারে থাকা বন্দি বা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও ডাক ভোটে অংশ নিতে পারবেন।
ভোটারদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে, এরপর ইসি ডাকযোগে ব্যালট পাঠাবে।
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এখন থেকে সর্বশেষ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন, দেশে ও বিদেশে আয় ও সম্পদের বিবরণ, নির্ভরশীলদের সম্পদের তথ্য দিতে হবে। এছাড়া এই সব তথ্য ও হলফনামা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে বলে আরপিও অধ্যাদেশে জানানো হয়েছে।
যদি কোনো নির্বাচিত প্রার্থীর হলফনামা বা আয়-ব্যয়ের বিবরণীতে ভুয়া তথ্য বা গরমিল পাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন তদন্ত শেষে তার আসন বাতিল করতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট আসনে পুনঃনির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারবে।
যাদের আদালতের রায়ে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে, তারা আর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন একটি ধারা যুক্ত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- নির্বাচনের সময় কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য, ভিডিও বা কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার করলে, সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
যদি এটি কোনো রাজনৈতিক দল বা সংস্থা করে, তাহলে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উভয়ই দায়ী হবে বলে অধ্যাদেশে জানানো হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, একজন প্রার্থী ও তার দল মিলিয়ে নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা বা প্রতি ভোটারের জন্য ১০ টাকা- যেটি বেশি হয় সেই পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন।
দলগুলো যে অনুদান বা অর্থ সাহায্য পাবে, সেটার পুরো বিবরণ প্রকাশ করতে হবে দলের ওয়েবসাইটে। নির্বাচন পরিচালনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ভূমিকা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে অধ্যাদেশে।
সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে এখন থেকে বিচারিক বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তাৎক্ষণিক বিচার করা যাবে।
একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন এখন থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবে এবং তার নির্বাচনী প্রতীক বাতিল রাখতে পারবে। নির্বাচন কমিশন এখন থেকে যেকোনো পর্যায়ে বা যেকোনো কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারবে যদি তারা মনে করে নির্বাচনে ন্যায্যতা বজায় রাখা সম্ভব নয়।
দুই বা ততোধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে নির্বাচন কমিশন পুনঃভোটের নির্দেশ দিবে বলেও অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোনো প্রার্থী, কর্মী বা প্রভাবশালী ব্যক্তি অযথা ভোটকেন্দ্র এলাকায় অবস্থান করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে সরিয়ে দিতে বা গ্রেপ্তার করতে পারবে।
অধ্যাদেশে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ডিজিটাল ভোটিং বা উভয় পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
