ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০১ এএম
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সফর দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ অক্টোবর) রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) প্রধান অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে প্রেসিডেন্ট লুলা এ এ আগ্রহের কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, এই দুই নেতা বিশ্ব খাদ্য ফোরামে মূল বক্তব্য প্রদান করেন এবং পরে এফএও সদরদপ্তরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন। সেখানে সামাজিক ব্যবসা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় কৌশলসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট লুলাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। লুলা দা সিলভা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে যাব।’ ব্রাজিল তার নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে এবং বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে আগ্রহী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দারুণ হবে!’

দুই নেতা গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত—বিশেষ করে টিকা পেটেন্টমুক্ত ও সাশ্রয়ী করার উদ্যোগ—জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা (আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে) এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত তরুণদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়েও সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে স্মরণ করেন, তিনি ২০০৮ সালে তৎকালীন ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে সফর করেছেন।

প্রেসিডেন্ট লুলা অধ্যাপক ইউনূসকে আগামী কপ-৩০ সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান, যা অ্যামাজন অঞ্চলের একটি রাজ্যে অনুষ্ঠিত হবে—বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্য সংরক্ষণের লড়াইয়ে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে।

আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণে তিনি সম্ভবত ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তব ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ১৬ বছর পর দেশ প্রথমবারের মতো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো ছিল জালিয়াতিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক।’

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।

একটি আনন্দঘন মুহূর্তে দুই নেতা ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী ঐক্যের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে মানুষ ব্রাজিল দলের সমর্থক।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য বিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। অপরদিকে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।