ইইউ রাষ্ট্রদূত: রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাফল্য শুধু নির্বাচনে সীমাবদ্ধ নয়


বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাফল্য শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা নির্ভর করে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সংস্কারের ওপর।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সিপিডি আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিপিডির এ গবেষণা কার্যক্রমে অর্থায়ন করেছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, প্রশ্ন হলো, কীভাবে এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাফল্য পরিমাপ করা যায়? এর উত্তর শুধু নির্বাচনে নয়, বরং সংস্কার বাস্তবায়নে নিহিত। এখানেই ‘জবাবদিহি বাড়াতে উচ্চকক্ষের ভূমিকা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে এবং আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের প্রস্তুতিতে অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখানে আছে আপনাদের দেশের রাজনৈতিক ট্রানজিশনকে সহায়তা করার জন্য। আমরা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।
তিনি জানান, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সফর করেছে, যারা সম্ভাব্য একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর উপযুক্ততা ও বাস্তবতা মূল্যায়ন করেছে।
‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আসন্ন নির্বাচন যেন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়’- বলেন মাইকেল মিলার।
ইইউ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের মতো গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসরণ বা ডেমোক্রেটিক ব্যাকস্লাইডিংয়ের ধারায় পা দেয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যা গণতন্ত্রের বিপরীতে চলমান বৈশ্বিক ধারা থেকে নিজেকে রক্ষা করছে, যদিও গত ১৪ মাসে কোনো সংসদ অধিবেশন হয়নি। তবুও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংসদ সচিবালয়কে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে, যেন পরবর্তী সংসদ আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী তদারকি কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারে।
মাইকেল মিলার বলেন, কার্যকর সংসদীয় তদারকি ও জবাবদিহির জন্য পাঁচটি দিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—সংসদীয় কমিটিকে আরও শক্তিশালী করা এবং গবেষণা ও বিল পর্যালোচনায় সহায়তা বৃদ্ধি; উন্মুক্ত ও প্রমাণনির্ভর আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা; বিশ্বাসযোগ্য বাজেট তদারকি ও নিরীক্ষা কার্যক্রম সক্রিয় করা; সংসদীয় প্রতিবেদন ও অগ্রগতি ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং তথ্যপ্রাপ্তি, গবেষণা ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, সংসদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে একটি বাস্তবধর্মী ও জবাবদিহিপূর্ণ আইন প্রণয়ন কর্মসূচি তৈরি করা সম্ভব।
মাইকেল মিলার আরও বলেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মন্তব্যগুলো আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছি, কারণ সেটি আপনাদের বিষয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমি যে বাস্তবধর্মী কর্মসূচির কথা বলেছি, তা বাংলাদেশের মতো দেশে সম্পূর্ণ বাস্তবায়নযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, এটি জবাবদিহি বাড়াবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সাধারণ নাগরিকরাই এর সুফল অনুভব করবেন। আরও পূর্বানুমানযোগ্য নীতি, উন্নত শাসনব্যবস্থা এবং জনঅর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ, নাগরিক সমাজ, সরকার, সংসদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। আপনাদের এ গুরুত্বপূর্ণ যাত্রায় আমরা পাশে থাকবো।