এস আলমসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির নির্দেশ


আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ ও পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ এ নির্দেশ দেন। দুদকের পক্ষে উপপরিচালক তাহসিন মুনাবিল হক এই আবেদন করেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে এএম ট্রেডিং নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে জাল নথি তৈরি করে তা ব্যবহার করেছেন। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণের নামে ১০৪ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাইফুল আলম দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অর্থ এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের স্বার্থে স্থানান্তর বা পুনর্বিন্যাস বা রূপান্তর করেছেন, যার পরিমাণ ৩৪০ কোটি টাকা।
তদন্ত চলাকালে আসামিদের আটক করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা বিদেশে পলাতক রয়েছেন। মোহাম্মদ সাইফুল আলম, আবদুস সামাদ এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোল কর্তৃক তা কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি।
এর আগে গত ১০ জুলাই সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা মোট ৪০টি ব্যাংক হিসাব এবং একাধিক বিমা পলিসি অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। তার স্ত্রীর নামে আরও ৪টি ব্যাংক হিসাব এবং তাদের দুজনের যৌথ নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬.৮ কোটি সিঙ্গাপুর ডলার বিনিয়োগ অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। তার আগে ৯ জুলাই এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা আরও ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে ১১৩ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৮ টাকা জমা রয়েছে।
এরও আগে গত ২৪ জুন সাইপ্রাসের লিমাসল জেলায় অবস্থিত সাইফুল আলমের (এস আলম) একটি দুইতলা বাড়ি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে হ্যাজেক ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডে তাদের বিনিয়োগকৃত ৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংসসহ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে আরও ১৮টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে ছয়টি ট্রাস্টে থাকা বিভিন্ন অঙ্কের বিনিয়োগও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
গত ২৩ এপ্রিল তার ৪০৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৫৯ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ১৭ এপ্রিল এস আলমের এক হাজার ৩৬০ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। গত ১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। একই দিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আট হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪ টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
এছাড়া গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত। গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।