পশ্চিম তীর দখলের চেষ্টা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রেড লাইন: ফ্রান্স


ইসরায়েলের পশ্চিম তীর দখলের যেকোনও চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হবে এক ‘রেড লাইন’। এতে আরব-ইসরায়েল কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণের অবসান ঘটবে বলে সতর্ক করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে এক বৈঠকে ট্রাম্পকে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিন পাতার একটি বিশদ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্স ২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
ম্যাত্রোঁ জানিয়েছেন, তার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন।
তিনি বলেন, তার এই পরিকল্পনার ভিত্তি নিউ ইয়র্ক ডিক্লারেশন, যা ১৪৩টিরও বেশি রাষ্ট্র অনুমোদন করেছে। এতে ভবিষ্যতে গাজা ও পশ্চিম তীরের শাসন থেকে হামাসকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং একইসঙ্গে একটি টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
ম্যাক্রোঁ ব্যাখ্যা করেন, আলোচনায় তার মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আরব দেশগুলোকে একই কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্মে আনা।
যখন ম্যাক্রোঁকে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ, বিশেষ করে বিতর্কিত ই-ওয়ান করিডরে ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, "এই বিষয়ে ইউরোপীয়রা এবং আমেরিকানরা সম্পূর্ণ একই অবস্থানে রয়েছে।"
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে পশ্চিম তীরের অবৈধ ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে ম্যাক্রোঁ জোর দিয়ে বলেন, দখলদারিত্বের পরিণতি হবে ভয়াবহ। তিনি বলেন, "পশ্চিম তীর দখলের যেকোনও চেষ্টা আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের সমাপ্তি ঘটাবে—যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের একটি সফল উদ্যোগ ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত এ বিষয়ে খুবই স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। আমি মনে করি, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি রেড লাইন।"
২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ডস ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সম্পাদিত হয়েছিল। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলে। এর মধ্যে সংযুক্ত আমিরাতও রয়েছে।
ম্যাক্রোঁর মতে, যদি ট্রাম্প সত্যিই জোর দেন যে দখলদারিত্ব কোনোভাবেই ঘটতে পারবে না, তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মারাত্মক রাজনৈতিক সমস্যায় পড়বেন। কারণ তার চরম-ডানপন্থি জোটের কিছু অংশ পশ্চিম তীর আংশিক বা পুরোপুরি দখলের দাবি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে যদি নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বা নীরব সম্মতিতে দখলদারিত্ব এগিয়ে নেন, তবে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পরিকল্পনা—যেখানে ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের পাশে থাকবে—গুরুতর ঝুঁকিতে পড়বে। নেতানিয়াহু আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।
মাখোঁ জানান, তার একেবারে নতুন বহু-পর্যায়ের পরিকল্পনার প্রথম লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং সব বন্দিকে মুক্ত করা।