তুলির আঁচড়ে সাজছে প্রতিমা, অপেক্ষা মণ্ডপে তোলার

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৪ এএম
তুলির আঁচড়ে সাজছে প্রতিমা, অপেক্ষা মণ্ডপে তোলার

আর মাত্র দু'দিন পরেই শুরু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। শরতের আবহে ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টির মধ্যেই মণ্ডপগুলোতে জাঁকজমকভাবে চলছে পূজার প্রস্তুতি। শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে প্রতিমার সাজসজ্জাও প্রায় শেষের দিকে। এখন অপেক্ষা প্রতিমাগুলোকে মণ্ডপে তোলার।

ষষ্ঠীর সময় এগিয়ে আসায় প্রতিমা শিল্পীদের যেন দম ফেলানোর সময় নেই। সময়মতো প্রতিমা হস্তান্তরে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী ও কারিগররা। তুলির আঁচড়ে তারা ফুটিয়ে তুলছেন দেব-দেবীর সৌন্দর্য।

সরেজমিনে রাজধানী পুরান ঢাকার বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরির পর এখন রং তুলিতে সাজাচ্ছেন শিল্পীরা। তুলির আঁচড়ে সেজে উঠেছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিকসহ বিভিন্ন প্রতিমা।

মন্দিরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শিল্পীদের কেউ প্রতিমায় দেওয়ার রং তৈরি করছেন, কেউ প্রতিমায় তুলির আঁচড় দিচ্ছেন আবার কেউবা প্রতিমায় অলংকার পরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শিল্পীরা জানান, ২৭ সেপ্টেম্বরের আগে প্রতিমা মণ্ডপে তুলতে হবে। কারণ, ২৮ তারিখ মহাষষ্ঠী। সেদিন থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আয়োজন। যদিও গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।

পুরান ঢাকার শ্রী শ্রী প্রাণ বল্লভ জিঁউ মন্দিরে প্রতিমায় রংয়ের কাজ করছেন মৃৎশিল্পী শ্রী আরাধন পাল (২৫)। তিনি বলেন, ‘২৭ তারিখের মধ্যে প্রতিমার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এখন রং তুলির কাজ চলছে। দেবী দুর্গাসহ বড় প্রতিমাগুলোর কাজ শেষ। ছোট প্রতিমাগুলোতে কেবল সাদা রং দিয়ে শুকাতে দিয়েছে। তারপর বাকি কাজ করবো।’

আরাধন পাল আরও বলেন, ‘নিজ হাতে প্রতিমা তৈরির পর সেটায় আবার রং দিয়ে দেব-দেবীকে ফুটিয়ে তোলা বেশ আনন্দের। একজন শিল্পী হিসেবে হয়তো আমি প্রাপ্ত মজুরি বা সম্মান পাই না, তবে কেউ যখন প্রতিমা শিল্পী হিসেবে আমাকে উপস্থাপন করে সেটা আমাকে বেশ গর্বিত করে। ছোটবেলায় বাবা, ঠাকুর দাদাদের কাছ থেকে এসব কাজ শিখেছি। তারা এখন আর বেঁচে নেই। প্রতিমা তৈরির কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’

লক্ষ্মীবাজার এলাকার ১৬ নম্বর কে. জি গুপ্ত লেনে প্রতিমায় রং তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছিলেন কিশোর সাহা (৫৬)। তিনি জানান, এবছর প্রতিমা তৈরির কাজ তুলনামূলক বেশি । এবার তিনি একাই ১৭টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। তাই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে হয়েছে।

আগের দিনের কথা স্মরণ কিশোর সাহা বলেন, ‘তিন দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। একটা সময় মজুরি পেতাম ৫০ টাকা ১০০ টাকা। তখন বেশ ভালো সংসার চলতো। আমাদের মতো শিল্পীদের কদর ছিল। আমার বাপ দাদারাও শিল্পী ছিলেন। সমাজের বিত্তবানরা বেশ সম্মান করতেন তাদের। কিন্তু এখন আর তেমনটা নেই। এখন দৈনিক ৬০০‌ টাকা মজুরি পেয়েও সংসার চলে না।’

সুমন কুমার পাল (২২) নামের আরেকজন প্রতিমা শিল্পী বলেন, ‘রং তুলির কাজ শুরু হয়েছে মহালয়ার পরপরই। আমি দেবী দুর্গা, গণেশ, কার্তিকসহ মোট ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছি। রং করা প্রায় শেষের দিকে। কাল যত্ন নিয়ে দেখবো সব ঠিক আছে কিনা। তারপর পরশু মণ্ডপে পাঠিয়ে দেব।’

রংয়ের দাম বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিল্পী বলেন, ‘আগে যে কৌটার দাম পাঁচ'শ টাকা এখন সেটা প্রায় সাতশ টাকা। পনের'শ টাকার রংয়ের কৌটা প্রায় দু'হাজার টাকা। রংয়ের দামের প্রভাব পড়েছে প্রতিমায়। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো আট থেকে দশ হাজার টাকা এখন সেই প্রতিমা তৈরিতে খরচ হচ্ছে বিশ হাজার টাকার ওপরে। এর সঙ্গে মজুরি যুক্ত হয়ে প্রতিমার দাম পড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।’

উল্লেখ্য, পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে সেদিন। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী, ২ অক্টোবর বিজয় দশমী প্রতীমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে।