জুলাই শহীদদের প্রেরণা অনুসরণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব: তথ্য উপদেষ্টা


তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, জুলাই শহীদদের প্রেরণা অনুসরণ করতে পারলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব। যেখানে রাষ্ট্র হবে সবার এবং সকলের নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
সোমবার (৭ই জুলাই) শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র 'শ্রাবণ বিদ্রোহ'-এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই প্রিমিয়াম শো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের ভূমিকা জনস্মৃতিতে রাখতে তথ্যচিত্র 'শ্রাবণ বিদ্রোহ' প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব কী, তা স্মরণ করে দেওয়ার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের অবদান জনস্মৃতিতে রাখা প্রয়োজন। তিনি শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে রেখে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই কখনো বেহাত হবে না। জুলাইয়ের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার চলছে, বিচার দৃশ্যমান। এই বিচার গ্রহণযোগ্য করতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাকে দমন করতে হয়। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনো মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য তিনি সকলকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে উদ্দেশ্যে শহীদরা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন এবং শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়-র মা শামসি আরা জামান। তারা তাদের শহীদ সন্তানসহ গণঅভ্যুত্থানে সকল শহীদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্বজন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে আন্দোলনের পটভূমি, ঘটনাপ্রবাহ এবং ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ-চেতনার গতিপথ। তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে শহীদদের স্বজন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রনেতা, শিক্ষার্থী এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের আন্দোলনকালীন স্মৃতিকথা ও নির্যাতনের চিত্র।
৩০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে আন্দোলনকালীন দুর্লভ ভিডিওচিত্র, স্থিরচিত্র ও গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জীবন্ত দলিল। তথ্যচিত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ঠুরতা এবং তৎকালীন স্বৈরশাসকের দমন-পীড়নের চিত্র কখনো প্রত্যক্ষ দৃশ্যায়নে, কখনো অ্যানিমেশনের সাহায্যে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ শুধু একটি তথ্যচিত্র নয়, এটি সময়ের দলিল—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাবে এক সফল গণঅভ্যুত্থানের গল্প।