‘দুদক সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে বিএনপির অবস্থান বিভ্রান্তিকর-হতাশাজনক’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম
‘দুদক সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে বিএনপির অবস্থান বিভ্রান্তিকর-হতাশাজনক’

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের শনিবার’র (৫ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধী ও হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

সোমবার (৭ জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করার লক্ষ্যে ওইসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই বিএনপি সম্মতি দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জনগনকে অবহিত করায় দলটিকে ধন্যবাদ জানায় দুদক সংস্কার কমিশন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তবে দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য আদালতের আদেশ নেওয়ার বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা বাতিল করার জন্য কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশ সমর্থন করতে বিএনপির ব্যর্থতা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, এ বাধ্যবাধকতা না রাখলে দুদকের কার্যক্রমে দেরি হবে দাবি করে যেভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে— তা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও স্ববিরোধী।

এ বাধ্যবাধকতাই দুদকের দ্বায়িত্ব পালনে বিলম্বসহ অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকরতার অন্যতম কারণ— যা দুদকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দুদক সংস্কার কমিশনের কাজের অংশ হিসেবে গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের নিকট প্রাপ্ত তথ্য-পরামর্শ বিশ্লেষণে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ ২৯-এ বলা হয়েছে— আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধন করে নিশ্চিত করতে হবে যে, দুদক কোনো তথ্য বা দলিলের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।

আয়কর আইনের অধীন প্রস্তুতকৃত বিবৃতি, দাখিলকৃত রিটার্ন বা হিসাব বিবরণী বা দলিলাদি ওই আইনের ৩০৯ ধারায় গোপনীয় বলে বিবেচিত এবং আদালতের আদেশ ছাড়া এনবিআর দুদককে এ সকল তথ্যাদি বা দলিলাদি দিতে পারে না। এই আইন প্রণয়নের আগে দুদক এনবিআর থেকে যে সকল তথ্যাদি বা দলিলাদি আদালতের আদেশ ছাড়াই পেতে পারতো, এই আইন প্রণয়নের পর তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এই সুপারিশে দ্বিমত পোষণ করে আদালতের অনুমতির প্রক্রিয়া বহাল রাখার পক্ষে বিএনপির অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করে কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদকের কার্যক্রমে অহেতুক বিলম্ব রোধ করার জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার যুক্তি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আদালতের অনুমতির বিধান রাখার ফলে দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা বৃদ্ধি এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতিহত করার সুযোগ তৈরি হয়—যা দুদকের অকার্যকরতার অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, ‘সুপারিশ-২৯-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআর-এর তথ্যে দুদকের অবাধ ও দ্রুত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার যুক্তিও ভিত্তিহীন, কারণ এ তথ্য দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে দুদকের প্রাপ্য, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা কোনো অযাচিতভাবে প্রকাশের জন্য নয়।

তিনি আরও বলেন, যে তথ্য এনবিআরের কাছে থাকতে পারে, তা এনবিআরেরই সহযোগী সংস্থা দুদককে পেতে হলে আদালতের আদেশ লাগবে— কোনো যুক্তিতেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। এনবিআরও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এ ধরনের প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশন জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, ওই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের গতি, কার্যকারিতা এবং নিরপেক্ষতা বাড়াবে—যা দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকরতার লক্ষ্য অর্জনের পূর্বশর্ত। কমিশন আশা করে, বিএনপি এ বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’

ড. জামান আরও বলেন, ‘এই সুপারিশের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়, বরং দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা। কমিশন বিশ্বাস করে, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে সমন্বয় এবং তথ্য আদান-প্রদান দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য এবং চলমান রাষ্ট্রসংস্কার উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’