হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর আজ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০১ জুলাই ২০২৫, ১০:৫০ এএম
হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর আজ

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ৯ বছর আজ। দেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ হামলায় বিদেশিসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছিলেন।

নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক এবং বাকি দুই জন ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক।

রাতভর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে জঙ্গিরা ওই বেকারিতে বেশ কয়েকজন অতিথি ও বেকারির কর্মচারীকে জিম্মি করে রাখে। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে “অপারেশন থান্ডারবোল্ট” পরিচালিত হয়। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয় এবং জিম্মি থাকা অন্তত ৩৫ জনকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ওই দিন পুরো রাত স্পর্শকাতর বিবেচনায় কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ সন্ত্রাসী। আইএসের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের “সৈনিক” বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় অনেক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে নিহত হয় অনেকেই।

সেদিন কী ঘটেছিল 

২০১৬ সালের ১ জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যারাতে হঠাৎ করে খবর আসে গুলশানে “সন্ত্রাসীদের সঙ্গে” পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলিতে আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

রাত ১০টার দিকে পুলিশ, র‌্যাব এবং আধা সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কয়েকশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেন। গণমাধ্যমকর্মীরাও ৭৯ নম্বর রোডের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে মারা যান বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। রাত ৪টা পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রাতভর হলি আর্টিজান বেকারি সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

২ জুলাই অভিযান

সকাল পৌনে ৮টার দিকে কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সকাল সোয়া ৮টায় বেকারি থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ছয়জনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাশের একটি ভবন থেকে একজন বিদেশি নাগরিক তার মোবাইল ফোনে সেটি ধারণ করেন।

৮টা ৫৫ মিনিটের দিকে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা। গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দারা। ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে অভিযান শেষ হয়। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়।

সেনাবাহিনীর “থান্ডারবোল্ট” অভিযানে জঙ্গি হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন। তারা হলেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাজ ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। এরপর সকাল ১০টাযর দিকে চার বিদেশিসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের লাশ পাওয়ার কথা পুলিশ জানায়।

১১টা ৫০ মিনিটে অভিযানে সন্ত্রাসীদের ছয়জন নিহত এবং একজন ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

মামলা দায়ের

আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত করে ওই বছরের শুরুতেই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত হওয়া কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি। মামলার তদন্তে নারকীয় সেই হামলার সঙ্গে মোট ২১ জনের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে পাঁচ জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এছাড়া হামলা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন অভিযানে ৮ জন নিহত হয়। জীবিত বাকি ৮ জনকে আসামি করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

আলোচিত এই ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চার্জশিটভুক্ত আট আসামি হলো- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন ও মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে মামুনুর রশিদ রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালিদ ছাড়া বাকি ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এ মামলার চার্জশিট দেওয়ার সময় রিপন ও খালিদ পলাতক ছিল। পরে এলিট ফোর্স র‌্যাব ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি গাজীপুর থেকে মামুনুর রশিদ রিপন ও ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শরিফুল ইসলাম খালেদকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আলোচিত এই ঘটনার পর হোলি আর্টিজান বেকারি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বেকারির স্বত্বাধিকারী গুলশানের অপর একটি জায়গায় তা চালু করেন। জঙ্গি হামলার সময় জিম্মি থাকা অনেকেই হোলি আর্টিজান বেকারির দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন।