প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন স্বৈরাচারকে ধরে ফেলতে পারি: প্রধান উপদেষ্টা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০১ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন স্বৈরাচারকে ধরে ফেলতে পারি: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ‘ফ‍্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।’ আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আজকের দিনটিকে ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এক বছর আগের এই দিনটির স্মরণে আজকে আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি। এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল তাৎক্ষণিক যেটা টার্গেট ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন—নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছর এই সময়কালটা উদযাপন করব—যাতে পরবর্তীতে ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয় আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য। আমরা প্রতি বছর এটা করব, যাতে কোনো স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিনাশ করতে পারি সেটার জন্য—এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ইউনূস বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।’

রাস্তার নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরে সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠা আন্দোলনকারী সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু- বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি—তা শুধুই স্মরণ নয়, বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল—আমরা চাই এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে।

তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। এই জুলাই মাসকে গণজাগরণের ও ঐক্যের মাসে পরিণত করার আহ্বানও জানান ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করব, যে লক্ষ্যে আমাদের তরুণ ছাত্ররা, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেব। এটা আমরা প্রতি বছর করব, যাতে স্বৈরাচার আবার কোনোরকমে মাথাচাড়া দিতে না পারে।

ড. ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচি সফলতার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য আমাদের সর্বমুখী হোক, অটুট হোক।

জাতির পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা।