ঢাকামুখী ফিরতি ঈদযাত্রা শুরু, লঞ্চ-ফেরিঘাটে উপচে পড়া ভিড়


ঈদের ছুটি শেষে অফিস শুরু হবে আগামী রবিবার। পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ভিড় করছেন যাত্রীরা। ফেরির পাশাপাশি লঞ্চযোগে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে।
আজ (শুক্রবার) সকালে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় ঢাকামুখী মানুষে উপচে পড়ছে ঘাট। মাত্র তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে একেকটি লঞ্চ। তারপর সেগুলো ছেড়ে যাচ্ছে পাটুরিয়ার উদ্দেশে।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থেকে আসা পোশাকশ্রমিক মেহেদী হাসান। এক হাতে লাগেজ নিয়ে আরেক হাতে স্ত্রীকে ধরে ভিড় ঠেলে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে এই যুবক বলেন, ঢাকার হেমায়েতপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও একই কারখানায় কাজ করেন। তারা সিএনজিতে করে দৌলতদিয়া ঘাটে নামেন। সড়কে তেমন যানজট না থাকলেও ঘাটে এসে ভিড়ের মুখে পড়েছেন।
মেহেদী বলেন, ‘শনিবার থেকে আমাদের কারখানা খুলবে। তাই আজ সকাল সকাল বের হয়েছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি সেই ভিড়। ভিড়ের মধ্যে যাতে কেউ হারিয়ে না যাই, সেজন্য কষ্ট হলেও এক হাতে লাগেজ আর অন্য হাত দিয়ে স্ত্রীকে শক্ত করে ধরে রেখেছি।’
কালুখালী থেকে আসা মিম আক্তার নামের আরেক পোশাকশ্রমিক জানান, তিনি সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে এখন কর্মস্থলে ফিরছেন। শনিবার থেকে তার কারখানাও খুলছে। তাই দেরি না করে আজই ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন তিনি।
সরেজমিন শুক্রবার সকালে দীর্ঘক্ষণ ধরে দেখা গেছে, লঞ্চঘাটের কাঠের সেতু দিয়ে যাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে পন্টুনে দাঁড়াচ্ছেন। টিকিট কাটার দায়িত্বরত শ্রমিকরা পন্টুন ছেড়ে কাঠের সেতুর ওপর গিয়ে যাত্রীদের থেকে নদীপাড়ের টিকিট দিচ্ছেন। পন্টুনে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখা লঞ্চগুলো মুহূর্তের মধ্যে যাত্রীবোঝাই করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।
এ সময় আনসার, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ সদস্যদেরও সহযোগিতা করতে দেখা যায়।
পাটুরিয়ায়ও যাত্রীর চাপ
এদিকে, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেও দেখা গেছে একই চিত্র। দৌলতদিয়ায় যাত্রীরা এসে জড়ো হচ্ছেন বলে সেখানে ভিড় বেশি, কিন্তু পাটুরিয়ায় নেমেই সবাই গন্তব্যের উদ্দেশে ঘাট ছাড়ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে পাটুরিয়াঘাটে আসছেন যাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি আসছেন মোটরসাইকেলের যাত্রী।
ফেরিঘাটে ফেরি ভেড়ার পরপরই যানবাহনগুলো নেমে গন্তব্যের দিকে ছুটছে। তবে লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
তাছাড়া পাটুরিয়া থেকে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত রয়েছে বিভিন্ন বাস পরিষেবা। বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে বেশ ভিড়। তবে সড়কে কিংবা ফেরিঘাটে কোনো ধরনের ভোগান্তি না থাকায় নিরাপদ ও স্বস্তিতে পারাপার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
এ ছাড়া, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটেও যাত্রীর চাপ বেড়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, পাবনার কাজিরহাট থেকে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে করে আরিচাঘাটে আসছেন যাত্রীরা।
এদিন দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য মাসুদ হোসেন বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার তেমন ভিড় ছিল না। আজ (শুক্রবার) সকাল ৯টার পর থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।’
‘ঈদের ছুটি শেষে শনিবার থেকে অনেকের অফিস, পোশাক কারখানা খুলবে। যে কারণে আজ সকাল থেকে লঞ্চঘাটে ভিড় শুরু হয়েছে। যাত্রীদের ভিড় সামাল দিতে আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।’
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের টার্মিনাল সুপারভাইজার মো. শিমুল হোসেন বলেন, ‘নির্বিঘ্নে যাত্রী পারাপারের জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি লঞ্চ সচল রয়েছে। এই মুহুর্তে ১৮টি লঞ্চ চললেও অতিরিক্ত চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও দুটি লঞ্চ পাশে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাত্রীর চাপ আরও বাড়লে ওই দুটি লঞ্চও চালু করা হবে।’