চিড়িয়াখানার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:৩০ জুলাই ২০২৫, ১১:২৪ পিএম
চিড়িয়াখানার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা
ছবি : সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতি গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এবং গবাদিপশু সেবা আধুনিকায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত। এসময় তিনি চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দৈন্যদশা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা হৃদয়বিদারক। আমি শুনেছি বছরের পর বছর ধরে প্রাণীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। এমনকি কখনও কখনও তাদের খাবারও চুরি হয়ে যায়। এটা স্রেফ অমানবিক। চিড়িয়াখানাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রয়োজন।’

বুধবার (৩০ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখনও সাগরের জগতে পুরোপুরি পা রাখতে পারিনি। এটি একটি অনন্য মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের মহাসাগর এবং আমাদের খামার উভয়কেই ধারণ করে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের কী ধরনের মৎস্য সম্পদ আছে, আমরা কী হারাচ্ছি এবং কেন আমরা পিছিয়ে আছি। এ খাতটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন বিশ্ব উন্মুক্ত করতে পারে—যদি আমরা এটি সঠিকভাবে কাজ করি।’

গভীর সমুদ্রে কার্যকর মৎস্য অঞ্চল চিহ্নিত করতে বঙ্গোপসাগরে যথাযথ জরিপ পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রয়োজনে জাপান বা থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘জাপান এরই মধ্যে আমাদের সহায়তা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা দেখবো যৌথ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব কিনা। কিন্তু তার আগে আমাদের নির্ভরযোগ্য তথ্য দরকার। এটা শুধু বেশি মাছ ধরার বিষয় নয়, এটা একটা শিল্প গড়ে তোলার বিষয়।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কক্সবাজারে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে গবেষণায় নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ ও ধারণা আনতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই কাজটি সরাসরি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণার খাতিরে এটা গবেষণা নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার গবেষণা যুক্ত করার বিষয়েও ভাবতে হবে, এভাবেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

প্রাণিসম্পদের বিষয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘খাদ্য ঘাটতি, রোগবালাই এবং টিকার উচ্চমূল্য গবাদিপশু খামারিদের জন্য মারাত্মক সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থানীয়ভাবে পশুখাদ্য ও ভ্যাকসিন উৎপাদনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। খরচ কমানো এবং আরও স্বাবলম্বী হওয়ার এটাই একমাত্র উপায়।’

তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান হালাল মাংসের বাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘হালাল মাংস উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ মালয়েশিয়া এখানে বিনিয়োগ করতে চায়। আমাদের অবশ্যই এটি খতিয়ে দেখা উচিত।’

চামড়া ও গবাদিপশুর চামড়া সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী বছরের ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আগাম পরিকল্পনা প্রয়োজন। আমরা একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হতে দিতে পারি না। গরুর চামড়ার ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজার নিশ্চিত করতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তিনি দেশের ভেটেরিনারি ক্লিনিকগুলো আধুনিকায়ন করারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এর মধ্যে অনেকগুলো পুরনো এবং কিছু এমনকি কাজ করছে না। আমাদের এগুলোকে কৃষক এবং পোষা প্রাণীর মালিকদের জন্য সত্যিকারের সহায়তা কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে।’

সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়বসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।