তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু জানুয়ারিতে, ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:৩০ জুলাই ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু জানুয়ারিতে, ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা

উত্তরের দুই কোটি মানুষের দুঃখ তিস্তা। এই তিস্তাকে ঘিরেই এই অঞ্চলে লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ হয়। কৃষি থেকে শুরু করে জেলে সবাই এই নদীর উপর নির্ভরশীল। বছরের পর বছর এই নদীর ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বাস্তুহারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উত্তরের অবহেলিত এসব মানুষের একটাই স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।

সব দ্বিধা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। ১০ বছর মেয়াদে ১২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। যেখানে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ইতোমধ্যে চীন দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল তিস্তার মাঠ পর্যায়ের জরিপ করছে।

ডিরেক্টর অব দ্য পলিটিক্যাল সেকশন জং জিং -এর নেতৃত্বে চীনা প্রতিনিধি দলটি মতবিনিময় করেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনসহ নদী পাড়ের মানুষের সঙ্গে। মতবিনিময় শেষে তারা আশ্বস্ত করেছেন চীন সরকার দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে চায়। সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারিতেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চীনের এই কর্মকর্তা।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাফিয়ার রহমান বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত তিস্তার সব পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আর বর্ষাকালে তিস্তায় প্রবাহিত হয় তিন থেকে চার লাখ ঘনফুট পানি। গজলডোবার সব কপাট খুলে দেয় ভারত। দ্রুত বেগে নেমে আসা তিস্তার পানিতে উত্তরের পাঁচ জেলা নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। ভাঙনের পাশাপাশি ব্যাপক ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তোলে তিস্তা অববাহিকার মানুষ।’

রিভারাইন পিপলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙন ও প্লাবনে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন উত্তরের ৫ জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও বাস্তুভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। 

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অববাহিকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। বিগত আওয়ামী সরকার তিস্তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছিল, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে তিস্তা পাড়ের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে।’

চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেছিল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। 

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে, তিস্তার দুই পারে পুনরুদ্ধারকৃত ১৭৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে  ইকোপার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, আধুনিক কৃষি, মৎস্য খামার, কৃষিভিত্তিক কলকারখানা, জনবসতি ও স্যাটেলাইট টাউন।’ 

তিনি আরও বলেন, তিস্তা খননের ফলে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে যমুনা সঙ্গে সারা বছর একটি নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হবে। তিস্তার শাখা প্রশাখা ও উপনদী গুলো হবে এক একটি জলাধার। মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চল হবে একটি স্বপ্নের ঠিকানা। হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির ক্ষেত্রে ঘটবে এক নীরব বিপ্লব। অবহেলিত এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আশা করছি আমাদের আন্দোলন সফল হবে।

নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এই অঞ্চলের মানুষের একটি ন্যায্য দাবি। অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার চীন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করবে। এই কাজটি হলে উত্তরাঞ্চল বদলে যাবে।

১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাৎ দিবস ও জুলাই শহীদ দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ। যেখানে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ও চীন সরকার। ১০ বছর মেয়াদে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ৫ বছরে সেচ, ভাঙন রোধ, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ গুরুত্ব পাবে।’ 

তিনি বলেন, ইআরডি থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার খসরা এখন চীন সরকারের কাছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।