মানবিক করিডর ইস্যুতে চীন জড়িত নয়: রাষ্ট্রদূত

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৮ মে ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম
মানবিক করিডর ইস্যুতে চীন জড়িত নয়: রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীন “তথাকথিত মানবিক করিডর” ইস্যুতে জড়িত নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, চীন যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত “বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের পাঁচ দশক: নতুন উচ্চতায়” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।

ইয়াও ওয়েন বলেন, “করিডর ইস্যু-তথাকথিত মানবিক করিডর ইস্যুতে আমি বলব, চীন এতে জড়িত নয়। আমি যতটুকু বুঝি, এটি (মিয়ানমারে) সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ সরবরাহে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর একটি উদ্যোগ। এ বিষয়ে চীন জড়িত নয়।”

তিনি জানান, চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার যথাযথ সমাধান করবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পারবে বলে আশাপ্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।

তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (টিআরসিএমআরপি) হালনাগাদ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ সংবাদ বিবৃতির কথা উল্লেখ করেন ওয়েন। ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশ চীনা কোম্পানিগুলোকে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য স্বাগত জানিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তিনি বলেন, “আমি বলব, এ বিষয়ে চীন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে চায় কি-না, সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক না-কি আন্তর্জাতিক জোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে- সে বিষয়ে বলা যায়, এই প্রকল্পটি কীভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে, তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে চীন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এই প্রকল্পটি শুরু করা যেতে পারে। এটুকুই আমি বলতে চাই।”

এর আগে রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, “চীন একটি বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের সমর্থন করে, যেখানে সার্বভৌমত্বের সমতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। প্রতিটি দেশ, সেটি যত ছোট, শক্তিশালী বা ধনী হোক না কেন, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার পূর্ণ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে।”

ইয়াও ওয়েন বলেন, “কোনো দেশই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না এবং প্রতিটি রাষ্ট্রেরই সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের পথ স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। চীন ও বাংলাদেশ সবসময় একে অপরকে সম্মান করে এসেছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবশ্যই বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকা উচিত। বাংলাদেশের জনগণ তাদের উন্নয়নের পথ নিজেরাই নির্ধারণ করার অধিকার রাখে।”

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় এবং এ দেশের নিজস্ব বাস্তবতাভিত্তিক আধুনিকায়নের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে চীন সবসময়ই ধারাবাহিক ও দৃঢ় সমর্থন দিয়ে আসছে।” বিনিময়ে বাংলাদেশও অবিচলভাবে “একচীন নীতি” অটলভাবে সমর্থন করেছে, তথাকথিত “তাইওয়ান স্বাধীনতা” প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে দৃঢ় থেকেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “আন্তর্জাতিক অস্থিরতা এবং বাংলাদেশে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্থিতিশীল ছিল এবং এর মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। এর মূল রহস্য হচ্ছে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। এই নীতিগুলো আমাদের ভবিষ্যতের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অটুট থাকবে।”

বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান এ এফ এম গাউসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।