রমজানের শেষে এসে চড়া সবজির বাজার, দাম বেড়েছে মাংসেরও


ঈদ সামনে রেখে রমজানের শেষ সপ্তাহে বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সবজির দাম আকাশচুম্বী। দাম বেড়েছে মাংসেরও।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ সবজিতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ অনেকটাই কমে এসেছে। শীত-গ্রীষ্মের মাঝামাঝি মৌসুম হওয়ায় সবজির দাম এ সময়ে বেশি বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা।
সবজি বিক্রেতা আরিফ বলেন, ‘এখন বাজারে না শীতের সবজি আসছে, না গরমের সবজির মৌসুম শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যবর্তী এমন অবস্থায় সবসময়ই সবজির দাম বেশি থাকে। মৌসুমি সবজি উঠতে শুরু করলে দাম আবার কমে আসবে।’
মালিবাগ কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করল্লা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৯০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও সজনে ডাটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
ঈদের আগে ছুটির দিনে সবজি কিনতে এসে হতাশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, রমজানের মাঝামাঝি সময় সবজির দাম অনেকটাই কমে আসলেও শেষের দিকে রীতিমতো আগুনে দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ইফাজ বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি সবজির কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। পেঁপে আর ঢেঁড়শ বাদে প্রতিটি সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের বাজারে সরবরাহ কমে আসবে, তাই আগে থেকে সবজি কিনতে এসে দেখি বাজারের বেহাল দশা।’
তবে কমেছে লেবুর দাম। রোজার শুরুতে লেবুর দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা হালি হলেও শেষ সপ্তাহে তা উল্লেখযোগ্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের এলাচ লেবু হালিপ্রতি ২০ টাকা, কাগজি এবং বাতাবি বিক্রি হচ্ছে হালিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
অন্যদিকে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত উচ্চমূল্যেই বিক্রি হচ্ছে বেগুন। জাতভেদে প্রতি কেজি বেগুন এখনও ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শসা ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং শসা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
ধনেপাতার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। খুচরা বাজারগুলোতে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং চালকুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এতকিছুর মধ্যেও আলুর দাম কম। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায় এবং খুচরা পর্যায়ে তার দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আলুর দাম কম থাকলেও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকায়। তবে পাইকারিতে প্রতি পাল্লা (১ পাল্লা= ৫ কেজি) পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে ভারতীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আদার দাম রয়েছে প্রায় আগের মতোই। জাতভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।
দাম বেড়েছে মুরগির মাংসের
ঈদের আগে বেশিরভাগ দোকানে মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। উত্তর ও মধ্য বাড্ডার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ থেকে ২১০ টাকা থাকলেও, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিদরে।
একইভাবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগিও। সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, মুরগি সরবরাহ বা পরিবহন ব্যবস্থায় কোনো সংকট নেই। কিন্তু ঈদের আগে বাজারে অনেক বাড়তি টাকা দিতে হয়। কর্মচারীদের ঈদ বোনাস, বাজারের তোলা টাকা, আড়তের ভাড়া— সব মিলিয়ে বাধ্য হয়েই ঈদের আগে দাম কিছুটা বাড়াতে হয়।
মুরগি বিক্রেতা সবুজ বলেন, ‘ঈদের এই কয়দিন মুরগির দাম একটু বাড়তি থাকবে। এখন যাকে দিয়েই কাজ করাবেন তাকেই ঈদের বকশিস দিতে হবে। সব মিলিয়ে লোকসান এড়াতে মুরগির দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।’
বাজারে মুরগির দাম বাড়লেও দাম স্থিতিশীল আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। জায়গাভেদে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যেই আছে।
ডিমের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। ফার্মের বাদামি ডিম পাইকারিতে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ডজন এবং খুচরা পর্যায়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে। সাদা ডিম পাইকারিতে ১১০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে চড়া ইলিশের দাম
মাছের বাজারে প্রায় প্রতিটি মাছের দামই বেড়েছে জিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো। সবচেয়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এক কেজির ওপরে ওজন হলে কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে। এছাড়া ছোট সাইজের ইলিশের দামও কেজিপ্রতি ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।
ইলিশ বিক্রেতারা বলেন, ইলিশের সরবরাহ একেবারেই কম। ছোট ইলিশ কিছুটা পাওয়া গেলেও বড় ইলিশ একেবারেই যৎসামান্য। এদিকে ঈদের আগে ইলিশের চাহিদা বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। সব মিলিয়ে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে।
অন্যান্য মাছের মধ্যে চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে। এক সপ্তাহ আগে মধ্যম সাইজের গলদা চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা থাকলেও এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
এছাড়া রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগে প্রায় প্রতিটি পণ্য উচ্চদরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের ছুটি শেষে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।