সুদহার কমাতে ইতিবাচক সাড়া চীনা প্রেসিডেন্টের


প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
আলম বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেসসচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
আলম বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন—সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। ‘এগুলো সুস্বাদু।’ আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এই দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেছেন।
উভয়পক্ষ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কৌশলগত দ্বিপক্ষীয় বিষয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষি, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সহযোগিতা ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থের সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এটিকে পারস্পরিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকে ড. ইউনূস দুদেশের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের ব্যাপক ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ও জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল।
বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা সংকটের ওপর গুরুত্বারোপ করে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে চীনের জোরালো ভূমিকা কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।
চীনা প্রতিনিধি দলে ছিলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
এদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গ্রেট হল অব চায়নায় পৌঁছালে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে বৃহস্পতিবার রাতে ড. ইউনূস বেইজিং পৌঁছেন।