ফের তুমুল সমালোচনার মুখে উপস্থাপিকা নিকোল
তুমুল আলোচনায় থাকা সংবাদ উপস্থাপিকা রোকসানা আঞ্জুম নিকোলকে নিয়ে আবারও সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চলছে তুমুল বিতর্কও।
নিকোল সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছিলেন কোটা আন্দোলনে নিহত শহীদ মীর মুগ্ধকে নিয়ে রাজনীতি বিষয়ক এক টকশোতে উপস্থাপনা করে। যেখানে তাকে বলতে দেখা যায়- পানি লাগবে পানি? মুগ্ধ আমাদের জন্য অনেক পানির বোতল রেখে গিয়েছে। এ কথা বলেই অঝোরে কেঁদে সবার নজরে আসেন এই উপস্থাপিকা। মুহূর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে।
মুগ্ধর প্রসঙ্গ শেষ না হতেই আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছিল আয়নাঘর ও হাওয়াভবন। বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে এই উপস্থাপিকা জিজ্ঞেস করেন- আয়নাঘর থেকে অনেকেই বের হচ্ছেন, আপনাদের সময় হাওয়াভবন ছিল মনে আছে নিশ্চয়ই, আবারো কি হাওয়াভবন চালু করার প্ল্যান আছে? আর এর পরপরই আলোচনার তুঙ্গে চলে আসেন নিকোল।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার এক টকশোতে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলায় এর প্রতিবাদ করে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই উপস্থাপিকাকে। এ সময় নিকোলকে রীতিমত বিকল করে দেন ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রচারিত ওই টকশোতে নিকোল ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবিরকে করা এক প্রশ্নে বলেন- এই মুহূর্তে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা দেশে নেই। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তিনিও বিদেশে। খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকেও বিদেশে নেওয়া হচ্ছে। তারেক রহমান তো বিদেশেই অবস্থান করছেন। অর্থাৎ মাইনাস ফোরের যে একটা তত্ত্বের কথা বলা হচ্ছে- দেশে এখন অনেকটা সেটাই কার্যকর। দেশে আছেন কেবল জামায়াতের তিনবারের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ বিষয়টাকে জামায়াত কীভাবে দেখছে?
জবাবে ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রথমে আপনার এই মাইনাস ফোরে আমার বিরাট আপত্তি। হাসিনা ইজ এ ডেড বডি। অ্যান্ড জয়- নেভার ওন দিস কান্ট্রি। তার মায়ের মতো, তার নানার মতো- একজন ‘বিশ্বাসঘাতক’। তো সেই ‘বিশ্বাসঘাতক’কে যদি আপনি ফোরের মধ্যে নিয়ে এসে যদি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তাহলে আমি সে বিষয়ে আলোচনা করতে চাই না।
তার কথা শেষ করার পর উপস্থাপিকা রোকসানা আঞ্জুম নিকোল বলেন, এই বিজয়ের মাসে আপনি বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছেন- আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার এই কথার প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলাম।
এর পরেই দুজনের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির বলেন, আমি এখানে আপনার অতিথি, আর ‘অতিথি ভগবান’। সো আপনি আমাকে অপমান করতে পারেন না।
আর পুরো বিষয়টি নিয়ে ওই রাত থেকেই সামাজিক মাধ্যমে চলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
নেটিজেনদের দাবি, শেখ মুজিবকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলায় ব্যারিস্টার শাহরিয়ারের ওপর একপ্রকার ক্ষিপ্তভাবে চড়াও হয়েছেন এই উপস্থাপিকা।
জাগোবার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন- ‘যমুনা টিভির ওই উপস্থাপিকার আচরণ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই—কারণ এটি তার এক দিনের ভুল নয়, বরং দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সাথে অবমাননাকর তুলনা করে যে বেয়াদবির পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তা শুধু সাংবাদিকতার শিষ্টাচার লঙ্ঘনই নয়; এটি তার পূর্বের ধারাবাহিক অপেশাদার মনোভাবেরই পুনরাবৃত্তি।
দুঃখজনক হলেও সত্য—এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সম্মানিত অতিথির সাথে তিনি ধৃষ্টতার সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, আলোচনা উত্তেজিত করেছেন এবং মিডিয়ার পেশাদার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। এতটাই মাত্রাহীন আচরণ করেছেন যে, তাকে আইনি জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হয়েছে—জেলও খাটতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তার ভঙ্গি, তার ভাষা, তার আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেন তিনি গণমাধ্যমকে নিজের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, অহংকারের প্রদর্শনী এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখানোর মঞ্চ মনে করেন।
একজন উপস্থাপিকার কাজ হলো আলোচনা পরিচালনা করা, অতিথিকে সম্মান দেওয়া, তথ্যসমৃদ্ধ প্রশ্ন করা এবং দর্শকদের সামনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। কিন্তু তিনি বারবার সেই দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ব্যক্তিগত আচরণকে পেশাদার দায়িত্বের ওপরে তুলে ধরেছেন। এতে শুধু তার নিজস্ব ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং পুরো যমুনা টিভি প্রতিষ্ঠানই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ—এখানে বেয়াদবি, অসভ্যতা বা ব্যক্তিগত আক্রমণের কোনো স্থান নেই। একজন অতিথি যতো ভিন্ন মতেরই হোন না কেন, তিনি একজন নাগরিক, একজন আলোচক এবং একজন আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারী—তাকে অসম্মান করা মানে প্রকাশ্যেই সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার প্রতি থুতু ছিটানো।
এখন সময় এসেছে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের ঘর ঠিক করার। উপস্থাপকদের আচরণ, ভাষা এবং পেশাদারিত্ব পুনর্মূল্যায়ন করার। কারণ একজন ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা কোনোভাবেই পুরো মিডিয়ার মর্যাদা নষ্ট করার অধিকার রাখে না।
সাংবাদিকতা মানে শালীনতা, সম্মান, যুক্তি—অহংকার, বেয়াদবি ও উত্তেজনা নয়।’
শামিম প্রামানিক নামের একজন লিখেছেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো- উপস্থাপক একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি, তিনি নিজে কিভাবে তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেন। আবার ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবাদ করেন? তাকে কি প্রতিবাদ করার জন্য বা গেস্টদের কথার সত্যি মিথ্যা বিচার করার জন্য বসানো হয়েছে? সত্যি মিথ্যা বিচার করবে শ্রোতা, দর্শক, জনগণ। তিনি কেবল উত্তরের স্বপক্ষে বক্তব্য জানতে চাইতে পারেন। প্রতিবাদ করতে পারেন কেবল প্রতিপক্ষ গেস্ট।
