স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াবে যেসব খাবার


মস্তিষ্ক সুস্থ থাকা মানেই নতুন বিষয় শেখা, মনোযোগ ধরে রাখা, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়। ঘুম, ব্যায়াম ও মানসিক চর্চার পাশাপাশি আমরা যা খাই, সেটাও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১৪টি খাবার সম্পর্কে, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং বয়সজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
১. সিমের বিচি
সিমের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে ফলেট এবং ভিটামিন-বি থাকে, এবং গবেষণায় দেখা গেছে এই পুষ্টিগুলো মস্তিষ্কের সঙ্কোচন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনি যেকোনো ধরণের সিমের বিচি খেতে পারেন। সবই আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
২. টমেটো
টমেটোতে লাইকোপিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কোষের ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতির হাত থেকে মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। ফলে এটি ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝেইমারস রোগের মতো মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক ।
৩. হলুদ
হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সক্ষম এবং এর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাগুণ রয়েছে। এটি মন ভালো রাখতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
৪. ব্রোকলি
ব্রোকলিতে ভরপুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-কে রয়েছে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এটি স্ফিংগোলিপিড নামক চর্বিজাত উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্ক কোষে গুরুত্বপূর্ণ।
৫. কুমড়োর বিচি
এই ছোট ছোট বিচিগুলোতে জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো স্নায়ু সংকেত আদান-প্রদান, শেখার ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
৬. ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে ক্যাফেইন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এটি মন ভালো রাখে, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং স্বল্পমেয়াদে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. বাদাম
বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন-ই থাকে, যা মস্তিষ্ক কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে আখরোট স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. কমলা
একটি মাঝারি সাইজের কমলাতে পুরো দিনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন-সি থাকে। ভিটামিন-সি মানসিক ক্ষমতা কমে যাওয়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯. ডিম
ডিমে থাকা কোলিন নামক উপাদান মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরিতে সহায়তা করে, যা মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানো ও স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও এতে গুরুত্বপূর্ণ বি-ভিটামিন রয়েছে।
১০. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে ক্যাফেইন ও এল-থিয়ানিন থাকে, যা একসঙ্গে মনোযোগ ও প্রশান্তি বাড়ায়। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা মস্তিষ্কের বার্ধক্যজনিত ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
১১. পূর্ণশস্য
ওটস, ব্রাউন রাইস, কুইনোয়ার মতো পূর্ণশস্য খাবার মস্তিষ্কে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে। এই স্থিতিশীল শক্তি মস্তিষ্ককে দীর্ঘক্ষণ সক্রিয় রাখে।
১২. বিটরুট
এই বিটরুট সবজিতে প্রাকৃতিক নাইট্রেট থাকে, যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
১৩. বীজজাত খাবার
চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্সসিডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবার রয়েছে। এই উপাদানগুলো স্নায়বিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের কোষ রক্ষায় সহায়তা করে।
১৪. কফি
কফিতে থাকা ক্যাফেইন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ক্যাফেইন মনোযোগ, সজাগ থাকা এবং মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে। এটি অ্যাডেনোসিন নামক একটি রাসায়নিককে ব্লক করে, যা ঘুমের অনুভূতি তৈরি করে। ফলে আপনি আরও সজাগ ও মনোযোগী থাকেন। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে কফি খেলে আলঝেইমার ও পারকিনসনের মতো রোগের ঝুঁকি কমতে পারে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
সঠিক খাবার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে, মানসিক অবক্ষয় রোধ করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুণভাবে সহায়তা করে। তাই এই ১৪টি খাবার আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখলে মস্তিষ্ক আরও সতেজ ও সক্রিয় থাকবে।
তথ্যসূত্র: হেলথ লািইন, ভার্চুয়া, কাম্বারল্যান্ডস্ বিশ্ববিদ্যালয়