খায়রুল হকের জামিন শুনানিতে আইনজীবীদের হট্টগোল


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন ও মামলা বাতিল আবেদনের শুনানিতে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের এজলাস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এই সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, “তারা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, এখন মায়া কান্না দেখাতে এসেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে যখন দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?”
পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী রবিবার মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। জানা গেছে, খায়রুল হকের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় করা হত্যা মামলা বাতিল ও জামিন চেয়ে গত রবিবার আবেদন করা হয়। আজ দুপুরে এ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
শুনানির আগেই খায়রুল হকের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এম কে রহমান, মহসিন রশিদ, জেড আই খান পান্না, মনসুরুল হক চৌধুরী, মোতাহার হোসেন সাজু, সৈয়দ মামুন মাহবুবসহ অনেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বিচারক এজলাসে ওঠার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল অংশ নিবেন। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহমেদ যোগাযোগ করেন এবং জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল এক সপ্তাহ সময় চেয়েছেন।
এ সময়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, “আমরা এখানে চার-পাঁচজন, যারা ৭৫ বছরের ওপরে। আমরা শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি, আজ শুনানি কেন হবে না? শুনানি করে রুল জারি করুন।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসিন রশিদ আদালতকে বলেন, “সাবেক প্রধান বিচারপতিকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আসামিকে রিমান্ডে না পাঠানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আমরা কোন আদালতে আছি? এমন বিচার বিভাগ আগে দেখিনি। আমরা জুডিশিয়ারিকে রক্ষা করতে এসেছি।”
এর উত্তরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, “খায়রুল হকের মতো কুলাঙ্গার আর কেউ এই বিচার বিভাগে আসেনি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তার কারণে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে যখন দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন কেউ কোথাও কথা বলেনি, এখন কেন মায়াকান্না দেখাতে আসছেন? তখন মায়াকান্না কোথায় ছিল।”
এই সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, ছাত্র থাকাকালে আমার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা হয়েছিল। তখন সিনিয়ররা কোথায় ছিলেন? কেউ আমার পক্ষে দাঁড়ায়নি।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, আজ শুনানি হবে না, এক সপ্তাহ পর শুনানির দিন ধার্য করা হলো। এ সময় এম কে রহমান বলেন, “আদালতকে ডিকটেট করবেন না।” এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তারা প্রতিবাদ জানায়। এজলাস কক্ষে ধীরে ধীরে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আসামিপক্ষের এক আইনজীবীকে ধাক্কাও মারা হয়।
পরবর্তীতে আদালত আগামী রবিবার বেলা ১১টায় মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিন রাতেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ি থানায় আব্দুল কাইয়ুম হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন খায়রুল হক। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সাংবিধানিক শূন্যতার সূচনা করেন। অবসর নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন।
এই রায়ের ফলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট সুপ্রিম আইনজীবী কোর্টের মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন দুর্নীতিমূলক, বিদ্বেষাত্মক ও জালিয়াতিমূলক রায় দেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া গত বছরের ২৫ আগস্ট খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গত ২৭ এপ্রিল ‘বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেফতার ও বিচারে সোপর্দকরণ’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করে।