জগন্নাথের ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা থেকে সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১১ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
জগন্নাথের ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা থেকে সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি
ছবি : সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ ওরফে অবন্তিকার (২৪) আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এতে তার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকীকে (আম্মান) অভিযুক্ত করা হলেও অব্যাহিত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে।

গত বছরের ১৫ মার্চ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা নগরের বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এ ঘটনায় তার মা তাহমিনা বেগম (শবনম) আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। প্রায় দেড় বছর পর কুমিল্লার আদালতে গতকাল রোববার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

দ্বীন ইসলামকে মামলা থেকে অব্যাহিত দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘অবন্তিকা মৃত্যুর আগে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে দ্বীন ইসলামকে অভিযুক্ত করে গেছে। এর চেয়ে বড় সাক্ষী আর কী হতে পারে? তাহলে দ্বীন ইসলাম কীভাবে বাদ পড়ল?’

এ বিষয়ে আজ সোমবার সকালে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল দুপুরে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণিত না হওয়ায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস–সংলগ্ন বাসায় ফ্যানের সঙ্গে অবন্তিকার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর আগে ফেসবুক পোস্টে আত্মহত্যার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানান অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ১৬ মার্চ রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তাহমিনা বেগম মামলা করেন। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর ওই দুজন গ্রেপ্তার হন। পরে তারা জামিনে মুক্ত হন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ তদন্তকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ ২৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবন্তিকার মুঠোফোনে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্ক্রিনশট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের কিছু খুদে বার্তা জব্দ করা হয়। তার ফেসবুকে দেওয়া ‘সুইসাইড নোট’ পর্যালোচনা করা হয়েছে। মুঠোফোনটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে প্রতিবেদন আনা হয়। সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

মেয়ের মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিরা শাস্তি পাবে কি না, এ নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘তদন্তের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি নিশ্চিত করেছে কি না, তা আমাকে জানায়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ করেও মেয়েকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পরিনি। সেই প্রশাসনের কর্মকর্তারা কীভাবে এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে? পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে দ্বীন ইসলামকে কোনোভাবেই রেহাই দিত না। আমি বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’