মানবিক সংকটে সুদান, এল-ফাশর থেকে পালিয়েছে অর্ধলক্ষের বেশি মানুষ
সাম্প্রতিক সময়ে সুদানের সৃষ্টি হয়েছে এক মানবিক সংকট। দেশটির আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফ (Rapid Support Forces) এল-ফাশর শহর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ সেখান থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দেড় বছর ধরে অবরোধ, খাদ্যাভাব এবং অবিরাম বোমাবর্ষণের পর আরএসএফ যোদ্ধারা এই শহরটির দখল নেয়। এরপরই শহরটি থেকে ব্যাপক গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ইউজিন বায়ুন বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, সহিংসতা থেকে বাঁচতে গত কয়েক দিনে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তারা এল-ফাশের থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত তাওইলা শহরের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
সেই মানুষগুলো ধর্ষণসহ অন্যান্য নৃশংসতার ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছে। জাতিসংঘ সংস্থাটি এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউজিন বায়ুন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেখানে প্রত্যেকটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখনো প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে। এই শহরটি একসময় দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল।
এদিকে এল-ফাশেরে জাতিগত নিধনেরও অভিযোগ উঠেছে। সেখানে আরব মিলিশিয়ারা আরব নয় এমন জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, আরএসএফ সেই একই জাতিগত আক্রমণের কৌশল অনুসরণ করছে।
তবে আরএসএফ গোষ্ঠীটি জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্টো, বিচার ছাড়াই হত্যার অভিযোগে তারা তাদেরই এক মিলিশিয়া সদস্য, আবু লুলু-কে আটক করেছে। বিবিসি ভেরিফাই-এ আবু লুলুকে এল-ফাশেরের কাছে কয়েকজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য চিহ্নিত করার পর, আরএসএফ আটককৃত সেই যোদ্ধার ফুটেজ প্রকাশ করে।
সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে। এই সংঘাতের ফলে পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ এবং গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।
এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
