গাজার শিশুদের জন্য মেলানিয়ার কাছে তুরস্কের ফার্স্ট লেডির আবেদন


গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনি শিশুদের পক্ষে কথা বলার জন্য মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান। শনিবার (২৩ আগস্ট) তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত চিঠিতে তিনি বলেন, গাজা এখন ‘শিশুদের কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর এবং শক্তি একত্রিত করতে হবে বলে চিঠিতে মেলানিয়াকে লিখেছেন এমিন এরদোয়ান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের প্রতি মার্কিন ফার্স্ট লেডির সমর্থনের প্রশংসা করে এমিন এরদোগান ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্যও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে ইউক্রেনের ৬৪৮ শিশুর প্রতি যে গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীলতা আপনি দেখিয়েছেন, তা গাজাতেও প্রসারিত হবে।’
চিঠিটি শুক্রবার লেখা হয়েছে এবং তুর্কি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় শনিবার তা প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউজ অবশ্য চিঠির অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
সম্প্রতি জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মূল্যায়ণ করেছেন যে, গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পাঁচ লাখ মানুষ এবং ১ লাখ ৩২ হাজার শিশুর জীবন অপুষ্টির কারণে হুমকির মুখে রয়েছে।
এসব তথ্য সামনে আসার পরই মেলানিয়া ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছেন এমিন এরদোয়ান। গাজার হাজার হাজার শিশুর কাফনে লেখা ‘অজানা শিশু’। এটি আমাদের বিবেকে অপূরণীয় ক্ষত তৈরি করছে।
চিঠিতে এমিনে এরদোয়ান আরও লিখেছেন, ‘আজকের এই সময়ে, যখন বিশ্ব একটি সম্মিলিত জাগরণ অভিজ্ঞতা করছে এবং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া একটি বৈশ্বিক ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে, আমি বিশ্বাস করি যে গাজার পক্ষে আপনার আহ্বান ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পূরণ করবে।’
গত শুক্রবার জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে এবং এটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা, চরম দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনে আইপিসি উল্লেখ করেছে যে, খাদ্য ঘাটতির ফলে শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। গাজার প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন শিশুই তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৩২ হাজার শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
গাজায় মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে সরাসরি আবেদন করার জন্য মেলানিয়া ট্রাম্পকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে মেলানিয়া ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন যেখানে তিনি শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
তুরস্কের ফার্স্ট লেডি সাধারণত রাজনীতিতে নিজেকে জড়ান না বরং পরিবেশগত বিষয়ে সক্রিয় থাকাকেই প্রাধান্য দেন তিনি। এজন্য জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের প্রশংসাও কুড়িয়েছে তিনি। এর আগে তিনি ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধে আটকে পড়া সিরীয় জনগণের পক্ষে এবং গত মার্চে গাজায় ইসরায়েলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।