হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ইসরায়েল

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:২০ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪৬ এএম
হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের নতুন প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ইসরায়েল। গতকাল ইসরায়েলের দুই কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। নতুন এ প্রস্তাবে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় হামাসের হাতে থাকা অর্ধেক ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির কথা বলা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজা নগরীর নিয়ন্ত্রণে নিতে নতুন হামলার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর থেকে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা নতুন করে গতি পায়। যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা আবার শুরুর জন্য হামাস ও ইসরায়েলকে চাপ দিতে শুরু করে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতার।

হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবে ইসরায়েলি ১০ জন জীবিত জিম্মি ও ১৮ মৃতদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলে কারাবন্দী দণ্ডপ্রাপ্ত ২০০ জন ফিলিস্তিনি ও অনির্দিষ্ট সংখ্যক নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে।

মিসরের দুজন নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র বলেছে, হামাস আরও কয়েক হাজার বন্দীর মুক্তি চেয়েছে।

প্রস্তাবে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আংশিক প্রত্যাহারের কথাও রয়েছে। বর্তমানে গাজার ৭৫ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে। এ ছাড়া প্রস্তাবে আরও মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশের অনুমতির কথা বলা হয়েছে, যেখানে ২২ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।

গত জুলাইয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সর্বশেষ পরোক্ষ আলোচনা কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। ওই আলোচনার ব্যর্থতার জন্য উভয় পক্ষ একে অপরকে দায়ী করে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত রূপরেখা ইসরায়েল আগে মেনে নিলেও কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধের কারণে আলোচনা অচল হয়ে পড়ে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা নগরীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইসরায়েলের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া গাজায় বসবাসরত আনুমানিক ১০ লাখ মানুষের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার কথা উঠলেও মাঠপর্যায়ে যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গতকাল মঙ্গলবারও ইসরায়েলের গুলিবর্ষণ, ট্যাংকের গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ট্যাংকগুলো গাজা সিটির উপকণ্ঠে অবস্থিত জেইতুন এলাকায় অবস্থান করছে এবং সাবরা এলাকায় গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল সম্ভাব্য নতুন সামরিক অভিযানের হুমকি দেওয়ার পর গত রোববার হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধ বন্ধ ও গাজায় আটক থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তির দাবি জানান।

দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার মতে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শিগগিরই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন আশা করা হচ্ছে। তবে তিনি তাঁর কট্টর ডানপন্থী জোটসঙ্গীদের চাপের মুখে রয়েছেন, যারা হামাসের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করছে। মন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও ইতামার বেন-গভির বলেছেন, হামাস পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত ।

হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক জানিয়েছেন, তাঁরা যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন, তা একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি, যা যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ আলোচনার পথ প্রশস্ত করবে।

আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগের দফাগুলোর বিপরীতে এবার হামাস কোনো অতিরিক্ত শর্ত ছাড়াই প্রস্তাবটি মেনে নিয়েছে। তবে যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, শর্তগুলোর মধ্যে এখনো বড় ফারাক রয়ে গেছে।