ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:৩০ জুলাই ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার

ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ তথ্য জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬০ হাজার ৩৪ জন নিহত এবং এক লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু। তবে হতাহতের এ সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান ইসরায়েল। যদিও তারা নিজেরা কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

এদিকে, ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ত্রাণ আনতে গিয়ে

গাজার আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, সোমবার (২৮ জুলাই) নুসেইরাত আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ শিশু ও ১৪ নারীসহ ৩০ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩৩ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রাণের জন্য কিছু লোক জড়ো হলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

আবার, মধ্য গাজায় ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে ত্রাণ নেওয়ার সময় মঙ্গলবার আরও ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হন।

এ নিয়ে মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল হুমকি মনে করলে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে। এছাড়া হামাসের উপস্থিতি টের পেলেই কোনো স্থাপনায় হামলা চালায় তারা।

অনাহারে মৃত্যু

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি মাসে অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ২৪ জন।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মোট ৮৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুধু চলতি মাসেই অপুষ্টিজনিত কারণে ৫৮ জন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু হয়েছে।

খাদ্য সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা গত দুই বছর ধরে দুর্ভিক্ষের ধারপ্রান্তে রয়েছে। তবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘গাজায় সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট— এবং সেগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই।’

তবে ইসরায়েলের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে— এমন অভিযোগ অস্বীকার করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার বলেন, দুর্ভিক্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে আলোচনা চলছে, তা বিকৃত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের একটি অংশ।

আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ সাঁতরে নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা

সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে ইসরায়েল। এর পরপরই জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানবাহিনীর কার্গো বিমান গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলতে শুরু করে। ফ্রান্স ও জার্মানিও এই কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।

তবে আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণের বেশিরভাগই পড়ছে ‘রেড জোনে’, যেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলেছে।

মঙ্গলবার অনেককে ত্রাণের জন্য ভূমধ্যসাগরে ঝাঁপ দিতে দেখা গেছে। অনেককে ভেজা চায়ের প্যাকেট বা আটা নিয়ে ফিরতে দেখা গেছে। একজনের হাতে ছিল এক ক্যান শস্যদানা।

মোমেন আবু আতাইয়া নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি ত্রাণ নিতে সাগরে নেমেছিলাম। প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাত্র তিন প্যাকেট বিস্কুট সংগ্রহ করতে পেরেছি।’

জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় আকাশপথে ত্রাণ পাঠানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছে। তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে ত্রাণ দেওয়া ব্যয়বহুল এবং স্থলপথে সহায়তা পাঠানোর তুলনায় অনেক কম ত্রাণ পৌঁছায়।

তাছাড়া ত্রাণের প্যাকেটগুলো ভিড়ের মধ্যে পড়লে আহত বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেই সঙ্গে হাজারো মানুষ একত্রে ছুটে আসায় মারাত্মক পদদলিত হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা।