যে ৭ দক্ষতা শেখানো উচিত ছিল স্কুলেই


স্কুল আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে – গণিত, ইতিহাসের সাল-তারিখ, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া। কিন্তু যত বড় হচ্ছি, ততই টের পাচ্ছি, জীবনের আসল কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ স্কুলের বইয়ে ছিল না।
টাকা-পয়সার ব্যবস্থাপনা, মানসিক চাপ সামাল দেওয়া, অফিসের রাজনীতি বোঝা কিংবা করের হিসাব করা – এসব আমরা শেখার আগেই বড় হয়ে গেছি। এখন সারাদিন শুধু গুগল করি – ‘কীভাবে অ্যাডাল্ট হওয়া যায়?’
আজ জেনে নিন কোন ৭টি গুরুত্বপূর্ণ জীবনদক্ষতা স্কুলে শেখালে আমাদের জীবন হয়তো একটু সহজ হতো-
১. অর্থনৈতিক সচেতনতা
শুধু টাকা রোজগার করলেই হয় না, জানতে হয় কীভাবে সে টাকা সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও খরচ করতে হয়। বাজেট করতে না পারলে, ঋণের ফাঁদে পড়া খুব সহজ। অথচ অনেকেই শেয়ার বাজারকে এখনও ‘জুয়া’ ভাবেন, কারণ এটি ঠিকভাবে শেখার সুযোগ হয়নি।
যখন পাশের সহকর্মী বা বন্ধু ছুটি কাটানোর প্ল্যান করছে, নিজের ইনভেস্টমেন্ট ঠিকমতো করছে, তখন নিজের অগোছালো আর্থিক অবস্থায় মনে হয় – ‘কেন আগে শিখলাম না!’
২. মানসিক স্বাস্থ্যের সচেতনতা
কারও পাশে থাকা, নিজের অনুভূতি বোঝা, মানসিক ক্লান্তি চেনা ও সেসব সামাল দেওয়া আজকের জীবনে খুব দরকারি।
তাই শুধু পড়াশোনায় নয়, ভালো সম্পর্ক গড়তে ও নিজের মানসিক শান্তির জন্যও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা জরুরি। অথচ আমাদের দেশের স্কুলগুলো এ বিষয়ে কোনো বিশেষ শিক্ষা দেয়না।
৩. গল্প বলা
শুধু ভালো আইডিয়া থাকলেই চলবে না, সেটা মানুষকে বোঝাতে না পারলে কিছুই হবে না। স্কুলে যেমন অনুচ্ছেদ পাঠ শেখানো হয়, তেমনি শেখানো উচিত – কীভাবে নিজের কথা মানুষের সামনে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে হয়।
গল্প বলার মধ্য দিয়ে তথ্য দেওয়া গেলে সেটা শ্রোতার বেশি মনে থাকে। কারণ মানুষ আবেগ দিয়ে ভাবতে ভালোবাসে।
৪. মাইন্ডফুলনেস
অফিস, পরিবার, দায়িত্ব আর দৌড়ঝাঁপের ভিড়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই। এমন সময়ে মনোসংযোগ ধরে রাখা, স্ট্রেস সামাল দেওয়া, এবং নিজেকে শান্ত রাখা – একেই বলে ‘মাইন্ডফুলনেস’।
এটি শুধু মানসিক নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। ছোট ছোট ব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন, বা নিজের অনুভূতি বুঝে নেওয়ার মতো অভ্যাস স্কুল জীবন থেকেই দরকার।
৫. নেটওয়ার্কিং বা যোগাযোগের কৌশল
পেশাগত জীবনে শুধু একা ভালো থাকলে হয় না, সঠিক মানুষের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। কেউ খুব সুন্দরভাবে কথা বলে, কেউ খুব রুক্ষ – তবুও সবার সঙ্গে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। কাকে কখন কীভাবে কথা বললে কাজ হবে – এই ‘সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স’ শেখার শুরুটা স্কুলে হলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে যোগাযোগের আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।
৬. নাগরিক শিক্ষা ও ব্যক্তিগত অধিকার
আমরা অনেকেই জানি না – আমাদের নাগরিক অধিকার কী, সরকার কিভাবে চলে, বা ভোট ছাড়া আর কীভাবে সমাজে অংশ নেওয়া যায়। অভিভাবকেরা ভাবেন, ‘আমরা আছি তো, সন্তানকে দেখব।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো – তারা কি সারা জীবন থাকবেন?
ব্যক্তিগত অধিকার যেমন বাকস্বাধীনতা, গোপনীয়তার অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার – এসব জানলে একজন মানুষ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সমাজে নিজের জায়গা করে নিতে পারে।
৭. দরদাম করার কৌশল
ভালো চাকরি, ভালো বেতন, এমনকি অফিসে নিজের মূল্য বোঝাতে গেলে দরকার ‘নেগোশিয়েশন’ স্কিল।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই দক্ষতা শেখে ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পদ্ধতিতে, অর্থাৎ অনেক ভুলের পর।
যদি স্কুলেই শেখানো হতো – কীভাবে নিজের প্রয়োজন বুঝিয়ে বলা যায় বা ঝগড়া না করে মতপার্থক্য মেটানো যায়, তাহলে বড় হয়ে এত দ্বন্দ্ব হতো না।
জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হয় বইয়ের বাইরে। কিন্তু যদি এসব বিষয় স্কুলেই শেখানো হতো, তাহলে হয়তো বড় হয়ে এতো বিভ্রান্তিতে পড়া লাগত না!
এই সাতটি বিষয় শুধু তথ্য নয়, বরং জীবনকে গুছিয়ে রাখার হাতিয়ার। সময় এসেছে, পরবর্তী প্রজন্মকে এগুলোর সঙ্গে পরিচিত করানোর। কারণ শুধু ডিগ্রি থাকলেই হয় না, জীবন চালাতে জানতে হয় জীবনমুখী দক্ষতা।
সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া