ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি কি ভেস্তে যাচ্ছে?


৯ জুলাইয়ের নির্ধারিত সময়সীমা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচিত ‘বিগ, বিউটিফুল’ বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তবে দুই দেশের মধ্যে কঠিন দরকষাকষিতে প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে পড়েছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট যদিও এই চুক্তিকে ‘সম্ভাব্য’ বলে আভাস দিয়েছেন। আর ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও একে ‘বড়, ভালো, সুন্দর’ চুক্তি বলে স্বাগত জানিয়েছেন। তবুও মূল আলোচনায় কৃষিপণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং ভারতীয় ইস্পাতের ওপর শুল্ক হ্রাসের মতো বিষয়ে মতবিরোধ কাটছে না।
ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা ও গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, পরবর্তী সাত দিন নির্ধারণ করে দেবে—ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি সীমিত ‘মিনি-চুক্তি’তে পৌঁছাবে, নাকি আলোচনা ভেঙে পড়বে।
প্রধান বাধা: কৃষি খাত
যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই ভারতের কৃষি বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে ভারত তাতে বাধা দিয়ে আসছে খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষকের জীবন-জীবিকা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির স্বার্থে। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিচার্ড রসো বলেন, ভারতের কৃষিখাত উন্মুক্ত করা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ভারতের ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার’ বা কিউসিও—যা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এগুলোর কারণে মার্কিন পণ্যের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র কী চায়
বর্তমানে দুই দেশের কৃষিপণ্যের বাণিজ্য প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের মতো, যেখানে ভারত মূলত চাল, চিংড়ি ও মসলা রপ্তানি করে; আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাদাম, আপেল ও ডাল আমদানি করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র আরও বড় পরিসরে ভুট্টা, তুলা, সয়াবিন ইত্যাদি রপ্তানি করতে চায়, যাতে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমানো যায়।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ চুক্তি ভারতের কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) এবং সরকারি খাদ্যক্রয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
সম্ভাব্য চুক্তির রূপরেখা
বিশ্লেষকদের মতে, একটি সীমিত বা ‘মিনি-চুক্তি’ হতে পারে বাস্তবসম্মত পথ। এতে শিল্পপণ্যে শুল্ক কমানো, যেমন- গাড়ি আমদানির ওপর ছাড়, এবং কিছু নির্বাচিত কৃষিপণ্যে কোটা নির্ধারণের মাধ্যমে সীমিত প্রবেশাধিকার দেওয়া হতে পারে—যেমন: বাদাম, মদ, জলপাই তেল, আপেল, আভোকাডো ইত্যাদি।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত যেন তেল, গ্যাস, বোয়িং প্লেন, হেলিকপ্টার এবং পরমাণু চুল্লি কেনার ক্ষেত্রে বড় বাণিজ্যিক অর্ডার দেয়। তারা আমাজন-ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানির জন্য খুচরা বাজারে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সহজ করতেও আহ্বান জানাতে পারে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
চুক্তি না হলেও ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের আশঙ্কা কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বরং ১০ শতাংশ ‘বেজলাইন’ হারে শুল্ক আরোপ হতে পারে, যা বর্তমানে বিদ্যমান এমএফএন (মোস্ট ফেভরড ন্যাশন) হারের ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে জিটিআরআইর শ্রীবাস্তব বলেন, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে চমক অস্বাভাবিক নয়। যদিও ভারতকে লক্ষ্য করে এককভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ন্যায্য নয়, তবু অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি