বলিউড বাদশার আরেক মুকুট

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
বলিউড বাদশার আরেক মুকুট
ছবি : সংগৃহীত

‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন শাহরুখ খান।’ এই খবর যতটা না চমকে যাওয়ার মতো ছিল, তারচেয়ে বড় চমক ছিল সংবাদ শিরোনামে ‘প্রথমবার’ শব্দের ব্যবহার। ‘প্রথমবার!’, ‘তার মানে, শাহরুখ খান এর আগে কখনোই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি?’–বিস্ময় নিয়ে এমন প্রশ্ন ছিল অনেকের মুখে। বিস্মিত হওয়ারই কথা, কেননা একটি প্রজন্মের অনেকেই জানেন না, শাহরুখ খান কখনও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি! কেন পাননি? এমন প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়াটা সত্যি কঠিন। ‘বাজিগর’, ‘ডর’ ও ‘আঞ্জাম’ সিনেমায় এন্টিহিরোর চরিত্র যেভাবে শাহরুখ পর্দায় তুলে ধরেছেন, তার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্য ছিল–এটি হয়তো অনেকে মনে করেন। কেননা শাহরুখ খান সেই অভিনেতাদের একজন যে ‘এন্টিহিরো’ বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

যদি এই সিনেমাগুলোর কথা বাদ দেওয়া যায়, তাহলে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমায় ভালোবাসার গল্পের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে যেভাবে নান্দনিক করে তুলেছেন, তার জন্য তো পুরস্কার কাম্য ছিল এই অভিনেতার। কিংবা ‘মাই নেম ইজ খান’-এর ব্যতিক্রমী চরিত্রের জন্য তো তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া যেত। দেশপ্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘স্বদেশ’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘ম্যায় হু না’, সিনেমাতে অন্য এক শাহরুখের দেখা মিলেছে; যার অভিনয়ের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেনি কেউ। হাস্যরসের গল্পেও তো শাহরুখ অনবদ্য, ‘ডুপলিকেট’, ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’, ‘বাদশাহ’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমাগুলোর কথাই বা দর্শক ভুলবেন কীভাবে? না, ভুলতে পারবেন বলেই অনেকের মতো।

যদি রোমান্টিক চরিত্রের কথা বলা হয়, তাহলে দেখা যাবে শাহরুখের মতো এতবার নিজেকে ভেঙে ভালোবাসার গল্প মনে হয় না বলিউডের কেউ পর্দায় তুলে ধরতে পরেছেন। ‘কাভি হা কাভি না’, ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’, ‘বীর জারা’, ‘চাহাত’, ‘কাভি খুশি কাভি গম’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘চলতে চলতে’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’, ‘ইয়েস বস’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি মেম’, ‘জাব তাক হ্যায় জান’ ‘জাব হ্যারি মেট সেজাল’সহ আরও কিছু সিনেমা আছে, যেখানে শাহরুখের অভিনয় ছিল অনবদ্য। আবার ‘দিল সে’, ‘পরদেশ’, ‘কাল হো না হো’, ‘রাজু বান গ্যায়ে জেন্টলম্যান’, ‘ডাংকি’, ‘রাম জানে’, ‘মোহব্বতে’, ‘গুড্ডু’ ‘ওহ ডালিং এ হ্যায় ইন্ডিয়া’, ‘মায়া মেমসাব’, ‘পেহলি’, ‘বর নে বানা দি জোড়ি’ সিনেমাগুলোয় ভালোবাসার চিত্র উঠে এসেছে একটু অন্য ভাবে। অন্যদিকে অ্যাকশন হিরোর ভূমিকাতেও শাহরুখ নিজস্বয়তার ছাপ তুলে ধরেছেন।

‘ডন’, ‘ডন-২’, ‘পাঠান’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘দিলওয়ালে’, ‘জওয়ান’ সিনেমাগুলোয় শাহরুখের অ্যাকশন বাকি বলিউড অভিনেতাদের চেয়ে কোনোভাবে কম ছিল বলা যাবে না। সুপারহিরো চরিত্রেও দর্শক মনোযোগ কাড়তে সফল হয়েছেন। ‘রা-ওয়ান’ সিনেমাটি তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানেই শেষ নয়, ‘জিরো’ সিনেমায় বামন চরিত্রে শাহরুখ যেখানে খোল-নলচে বদলে পুরোপুরি ভিন্নরূপে হাজির হয়েছেন–যা এখনও দর্শক মনে এই ভাবনার খোরাক জোগায়–তিনি এমন চরিত্র কীভাবে খুঁজে নিলেন। সময়ের চাহিদা পূরণেও ‘কিং খান’ পিছিয়ে থাকেনি। ‘করণ অর্জুন’, ‘কয়লা’র মতো সিনেমায় যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি গতানুগতিক গল্প একটু আলাদা ধাঁচের চরিত্র বেছে নিয়েছেন ‘দিওয়ানা’, ‘দিল আশনা হ্যায়’ সিনেমাগুলো।

উপন্যাসের পাতায় স্থান পাওয়া কালজয়ী চরিত্র ‘দেবদাস’-কেও নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন দারুণভাবে। একই ভাবে ‘আশোকা’য় অভিনয় করে ইতিহাস হাতড়ে দেখার উৎসাহ জুগিয়েছেন দর্শককে। অন্যদিকে ‘রইস’-এ অভিনয় করে ভারতীয় জীবনধারার বাস্তবতাকে তুলে এনেছেন অনন্য অভিনয় দিয়ে। অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেও জাত চিনিয়েছেন বলিউড ইন্ডাস্ট্রির এই শক্তিমান অভিনেতা। ‘শক্তি: দ্য পাওয়ার’, ‘হে রাম’, ‘ভূতনাথ’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ সিনেমাগুলোর কথাও দর্শকমন থেকে মুছে যাওয়ার নয়। এ কথায়, শাহরুখের তুলনা শুধু তাঁর সঙ্গেই চলে; যার প্রতিটি সিনেমা আর অভিনীত চরিত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করা যায়। সেদিকে না গিয়ে আমরা বরং ফিরে আসি তাঁর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রসঙ্গে। 

নাম-যশ-খ্যাতি সবই আছে। ঘরের সেল্ফে থরে থারে সাজানো আছে সেরা অভিনেতা হিসেবে পাওয়া ‘ফিল্ম ফেয়ার’, ‘জি সিনে অ্যাওয়ার্ড’, ‘আইফা অ্যাওয়ার্ড’ থেকে শুরু করে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক। তিন যুগের অভিনয় ক্যারিয়ারে এমন স্বীকৃতি জুটেছে বহুবার। শুধু মেলেনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের। কেন যে মেলেনি সেই স্বীকৃতি তা বলা কঠিন। দেরিতে হলেও প্রমাণ হলো, অভিনয় দুনিয়ায় শাহরুখ তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে পরাজিত নন। 

এ কারণেই ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে শাহরুখ খানের নাম ঘোষণা হতেই ভারতজুড়ে তাঁর অনুরাগীমহলে শুরু হয়েছে বিজয়োল্লাস; যার মধ্য দিয়ে শাহরুখের অপেক্ষার অবসানও ঘটেছে। তিন যুগের পথ পরিক্রমায় হাতে উঠছে সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। শুধু ভারত নয়, অভিনেতার এই অর্জনে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে তাঁর বন্দনাগীত। ‘বলিউড বাদশাহ’, ‘কিং খান’ উপাধিতে ভূষিত শাহরুখের জন্য এই পুরস্কার পাওয়াটা ছিল সময়ের দাবি–এমন মনে করেন সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রবোদ্ধা অনেকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ২০২৪ সাল ছিল কিং খানের কামব্যাক ইয়ার। 

‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ আর ‘ডানকি’ তিনটি সিনেমাতেই ভেঙেছেন সমস্ত বক্স অফিস রেকর্ড। শুধু ভারতেই ৭ কোটির বেশি দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে একাই টেনে এনেছেন শাহরুখ। ভারতের বক্স অফিসে আয় ১৩০০ কোটির বেশি। বিশ্বব্যাপী ২৫০০ কোটির বেশি আয় করেছেন; যা বলিউডে একক নজির। এর মাঝেই ‘জওয়ান’ সিনেমায় দ্বৈত চরিত্রে শাহরুখের বিস্ফোরক অভিনয় নজর কেড়েছিল সমালোচকদেরও। অ্যাকশন, আবেগ, স্টাইল আর স্টেটমেন্টর একাই একটা ধাক্কা হয়ে এসেছিল সিনেমাটি। এবার সেই কাজটাই এনে দিল জীবনের প্রথম জাতীয় পুরস্কার। এত কিছুর পরও শাহরুখ কেবল দেখা গেল হাসিমুখে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে; যা থেকে বোঝা যায়, তার যা কিছু বলার আছে, দেখানো ও জানিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা–তার সবই প্রকাশ করতে চান অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। অভিনয়ই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা এবং পেশা ও নেশা।