সভা-সমাবেশেই না, সাগরপাড়েও জন্ম নেয় ইতিহাস: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
সভা-সমাবেশেই না, সাগরপাড়েও জন্ম নেয় ইতিহাস: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষ নেতা। এ ঘটনায় দলের দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন তাদেরই একজন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ, ইতিহাস কেবল সভা-সমাবেশে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরপাড়েও জন্ম নেয়।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন বরাবর বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দেওয়া লিখিত জবাবে নাসীরুদ্দীন বলেন, ৫ আগস্ট কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও তাঁকে এ–সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি। তাই তিনি কক্সবাজারে যান।

ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে নাসীর জানান, ৪ আগস্ট হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর কোচিংয়ের সহকর্মীর মোবাইল থেকে ফোন করে জানান, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে তিনি দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাবেন—বিষয়টি যেন দলের আহ্বায়ককে জানানো হয়। এর আগে দলীয় পদযাত্রার সময় হাসনাতের ফোন চুরি হয়েছিল।

সেদিন রাতেই পার্টি অফিসে নাহিদ ইসলামকে বিষয়টি জানান বলে দাবি করেন নাসীর। তিনি বলেন, দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন তাঁকে জানান যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এনসিপির তিনজন প্রতিনিধি যাবেন, যেখানে নাসীরের কোনো দায়িত্ব নেই। তাই তিনিও হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহর সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নাসীর বলেন, ‘আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম, তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তাভাবনা করা। সাগরপাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি—গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’

কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়ার কারণে গুজব ছড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে গুজব ছড়িয়েছেন যে এনসিপির শীর্ষ নেতারা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায়, সেখানে পিটার হাস নামের কেউ নেই। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।

নাসীর বলেন, ‘আমি মনে করি, শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব প্রদান করছি—অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন হিসেবে।’

গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে শোকজ পান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।