হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল


তহবিল কাটছাঁটের পর এবার বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সুযোগও হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ মে) দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ক্রিস্টি নোম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে আর বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে পারবে না দেশটির সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি বর্তমানে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন, তাদের অবশ্যই স্থানান্তর করতে হবে, না হলে তারা দেশটিতে অবস্থানের আইনগত বৈধতা হারাবেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও তীব্র হলো।
ক্রিস্টি নোম বলেন, “হাভার্ড এমন একটি ‘অসমর্থনযোগ্য ও সন্ত্রাসবাদী’ পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে ইহুদি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।”
এ ছাড়া, চীনের সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গেও বিশ্ববিদ্যালয়টির যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নোমের দাবি, ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও আতিথেয়তা দিয়েছে হাভার্ড।
এ বিষয়ে তিনি গত বছর ট্রাম্প-সমর্থিত ফক্স নিউজের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে দাবি করা হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের শিনজিয়াং প্রোডাকশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন করপোরেশনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাভার্ড। মার্কিন রিপাবলিকান দলের কংগ্রেস সদস্যরা একটি চিঠিতে এ বিষয়টির উল্লেখ করেছেন।
ক্রিস্টি বলেন, ‘আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তারা আর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না এবং বর্তমানে থাকা শিক্ষার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তর হতে হবে। নইলে তাদের আইনগত বৈধতা হারাবে।’
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৭ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন, যা ওই সময় ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে বেআইনি হিসেবে অভিহিত করেছে হাভার্ড কর্তৃপক্ষ। সরকারি এই সিদ্ধান্তের পর তারা শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়ারও চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, সরকারের এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ডের সদস্য ও দেশের জন্য গুরুতর ক্ষতির হুমকি তৈরি করেছে। একই সঙ্গে হার্ভার্ডের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমেরও ক্ষতি করছে।
এর আগে, হাভার্ডসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ইহুদি-বিদ্বেষের আখড়া’ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তবে এ দাবিকে অস্বীকার করে হাভার্ড কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া গত বসন্তে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য না দিতে প্রকাশ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতা করায় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।
এর জেরেই জানুয়ারি মাসে হাভার্ডের ২৬৫ কোটি ডলারের তহবিল কমিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির করমুক্ত সুবিধাও বাতিল করার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এদিকে ক্রিস্টি নোম বলেন, ‘গত বসন্তে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীদের ভিডিও বা অডিও রেকর্ডসহ সব ধরনের তথ্য যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে দেওয়া হয়, তাহলে তারা আবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারবে।’
এ বিষয়ে হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, ‘ইহুদি-বিদ্বেষ মোকাবিলায় গত দেড় বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং একটি বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।’ তবে আইনসম্মত ও মৌলিক নীতিমালার প্রশ্নে তারা এক চুলও নড়বে না বলে সতর্ক করে দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের অভিযোগ, বিদেশি শিক্ষার্থীরা অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা বা অনিয়মে জড়িত। কিন্তু এই অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেননি।’
অন্যদিকে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগসূত্র সম্পর্কে হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র জানান, এ বিষয়ে তারা কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের ওই চিঠির জবাব দেবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ চলেছে, সে সময় ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে হাভার্ড কর্তৃপক্ষ। এর জেরেই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে বেশিরভাগ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে নিজেদের ধারণার কথা জানিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমেরিকান শিক্ষা কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট টেড মিশেল। দেশটির প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপকে ‘অবৈধ ও সংকীর্ণ মানসিকতা’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করবে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসার আগ্রহ হারাবেন।’
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আইনি অবস্থান নিয়ে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাকে একটি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়টি আগে কেবল প্রশাসনিক ডেটাবেস হিসেবেই ছিল। এখন তা হয়ে উঠেছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ। অভিবাসন কর্মকর্তারা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষার্থীদের বৈধতা বাতিল করেছে।
পরবর্তীতে এই প্রচেষ্টা আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং এতে অনেক শিক্ষার্থীর বৈধতা পুনর্স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসন যেন আর এভাবে বৈধতা বাতিল করতে না পারে সেজন্য সারা দেশের জন্য একটি নিষেধাজ্ঞাও জারি করে আদালত।