এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন শুরু


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ রবিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। ফলে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম, স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারি, মূল্যায়ন ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স। ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আদায় এবং দেশের বাণিজ্যিক প্রবাহ।
গতকাল শনিবার এনবিআরসহ দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয়ে দিনভর পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। আজ রবিবারও সারাদেশে এই কর্মসূচি চলছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি গতকালের তুলনায় কম দেখা গেছে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মকর্তারা ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে কোনো কার্যকর সাড়া না আসায় “মার্চ টু এনবিআর” ও “পূর্ণ শাটডাউন” কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, গতকালও বিভিন্ন শুল্ক-কর কার্যালয় থেকে “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কাজ হয়নি। ফলে এসব স্টেশন থেকে শুল্ক-কর আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিসিআই, বিজিএপিএমইএ, লেদার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইসিসি বাংলাদেশ, এফবিসিসিআইসহ অন্তত ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠন একযোগে এনবিআরের অচলাবস্থার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, “আমাদের শীতকালীন রপ্তানির অর্ডারগুলো ঝুঁকির মুখে। বায়াররা অন্য দেশে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এই অচলাবস্থা দেশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, “আমরা বুঝি এনবিআর কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কিন্তু এভাবে পুরো অর্থনীতিকে জিম্মি করা সমাধান নয়। সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনায় বসা।”
এর আগে, গতকাল (শনিবার) এক বিবৃতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, তাদের “কমপ্লিট শাটডাউন” ও “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচি রবিবারও (আজ) চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ “অপ্রয়োজনীয়” এবং এতে কোনো সুফল আসবে না বলে ব্যবসায়ীদের একটি বিবৃতি নিয়েও সে সময় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে ঐক্য পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ওই বিবৃতিতে (ব্যবসায়ীদের) কেন একটি স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী হয়ে ওঠা আমলাকে অপসারণ অনুচিত বলে মনে করা হচ্ছে- তা পরিষ্কার করা হয়নি।”
তারা বলেন, “এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের অপসারণ কেন প্রয়োজন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তারা ইতোমধ্যেই দিয়েছেন। তার অপসারণ ছাড়া রাজস্ব খাতের ‘সম্পূর্ণ, বাস্তবসম্মত, টেকসই ও প্রকৃত’ সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা আশা করি সরকার, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং জনগণ আমাদের এই ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করবেন।”
পরিস্থিতি নিরসনে মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহও প্রকাশ করে ঐক্য পরিষদ।
প্রশাসনিক অনিয়ম, কর্মকর্তাদের হুমকি ও সংস্কারবিরোধী কার্যকলাপে এনবিআর চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তার অপসারণ ও কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এ মাসের শুরু থেকে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা কর, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি, অনশন ও মানববন্ধন করে আসছেন, যার ফলে এসব সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
গত ১২ মে সরকারের এক অধ্যাদেশ জারির পর এই আন্দোলন শুরু হয়, যার মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতিনির্ধারণ বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।